কবর যিয়ারত ও কবরবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন
কবর যিয়ারত ও কবরবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন
পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি[মূল প্রশ্ন]ইমাম আহমাদ ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: যে ব্যক্তি কবর যিয়ারত করে ও কবরবাসীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে কোনো রোগের জন্য অথবা ঘোড়ার আরোগ্যের জন্য অথবা কোনো বাহনের জন্য, তার মাধ্যমে রোগ দূরীকরনের প্রার্থনা করে, আর সে বলে, হে আমার নেতা; আমি তোমার আশ্রয়ে আছি, আমি তোমার ছত্র-ছায়ায় আছি, অমুক আমার ওপর যুলুম করেছে, অমুক আমাকে কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছা করেছে। সে আরও বলে, কবরবাসী আল্লাহ ও তার মাঝে মাধ্যম হবে। আবার তাদের কেউ কেউ ওলীদের মসজিদ খানকা ও তাদের জীবিত ও মৃত পীরদের নামে টাকা, উট, ছাগল, ভেড়া, তেল প্রভৃতি মানত করে। সে বলে, যদি আমার সন্তান সুস্থ হয় তবে আমার পীরের জন্য এটা, এটা এবং অনুরুপ কিছু। আবার তাদের কেউ কেউ তার পীরের দ্বারা উদ্ধার প্রার্থনা করে ঐ অবস্থায় তার অন্তর যেন দৃঢ় থাকে। আবার কেউ কেউ তার পীরের কাছে আসে এবং কবর স্পর্শ করে এবং তার কবরের মাটিতে চেহারা ঘর্ষণ করে, হাত দ্বারা কবরকে মাসেহ করে ও তা দিয়ে তার মুখ মাসেহ করে, অনুরূপ আরো অন্য কিছুও করে থাকে। আবার তাদের কেউ কেউ তার প্রয়োজন পূরণের ইচ্ছা করে তার পীরের কবরের কাছে গিয়ে বলে, হে অমুক! আপনার বরকতে (তা হোক) অথবা বলে আমার প্রয়োজনটা আল্লাহ এবং পীরের বরকতে পূর্ণ হয়েছে। আবার তাদের কেউ কেউ শামা গানের আমল করে এবং কবরের কাছে যায়, অতঃপর পীরের সামনে মাথা নত করে ও মাটিতে সাজদায় লুটিয়ে পড়ে। আবার তাদের কেউ কেউ বলে থাকে, সেখানে বাস্তবেই কোনো পূর্ণ গাউছ কুতুবের অস্তিত্ব আছে। সুতরাং আপনি আমাদেরকে ফাতওয়া দিন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন আর এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।
[জবাবের সূচনা]শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. জবাবে বলেন,সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রবের জন্য, যে দীন নিয়ে আল্লাহ তাঁর রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন এবং তাঁর কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন তা হলো: একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, যার কোনো শরীক নেই। আর তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং তাঁর ওপর ভরসা করা। আর তার কাছে কল্যাণ লাভের জন্য এবং অনিষ্ট দূরীকরণের জন্য দো‘আ করা। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤۡتِيَهُ ٱللَّهُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحُكۡمَ وَٱلنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُواْ عِبَادٗا لِّي مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن كُونُواْ رَبَّٰنِيِّۧنَ بِمَا كُنتُمۡ تُعَلِّمُونَ ٱلۡكِتَٰبَ وَبِمَا كُنتُمۡ تَدۡرُسُونَ ٧٩ وَلَا يَأۡمُرَكُمۡ أَن تَتَّخِذُواْ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ وَٱلنَّبِيِّۧنَ أَرۡبَابًاۗ أَيَأۡمُرُكُم بِٱلۡكُفۡرِ بَعۡدَ إِذۡ أَنتُم مُّسۡلِمُونَ ٨٠﴾ [ال عمران: ٧٩، ٨٠] “কোনো ব্যক্তির জন্য সঙ্গত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হেকমত ও নবুওয়াত দান করার পর তিনি মানুষকে বলবেন, আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা আমার দাস হয়ে যাও, বরং; তিনি বলবেন, তোমরা রব্বানী হয়ে যাও, যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দাও এবং যেহেতু তোমরা অধ্যয়ন কর , অনুরূপভাবে ফেরেশ্তাগণ ও নবীগণকে রবরূপে গ্রহণ করতে তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দেন না। তোমাদের মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফুরীর নির্দেশ দেবেন?” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৯-৮০]এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যখন ফিরিশতাগণ, নবীগণকে রব হিসেবে গ্রহণ করা শির্ক ও কুফুরী বলে সাব্যস্ত করেছেন, তখন তাদের থেকে নিম্ন পর্যায়ের লোক পীর-মাশাইখদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করা কী হবে তা সহজেই অনুমেয়?ব্যাখ্যামূলক বক্তব্য: বান্দা (আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও কাছে) যদি এমন সব বিষয় চায় যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ দিতে সক্ষম নয়। যেমন, মানুষ বা জীব জন্তুর রোগের আরোগ্য প্রার্থনা অথবা কোনো সুনির্দিষ্ট উৎস ব্যতীত দেনা পরিশোধ অথবা তার পরিবার পরিজনের ক্ষমা এবং দুনিয়া ও আখিরাতের অন্যান্য বিপদ মুসীবত অথবা শত্রুর ওপর বিজয়ী হওয়া অথবা অন্তরের হিদায়াত ও গুনাহের ক্ষমা অথবা তার জান্নাতে প্রবেশ অথবা জাহান্নাম থেকে মুক্তি অথবা কোনো ইলম ও কুরআন শিক্ষা লাভ করা অথবা অন্তরের সুস্থতা এবং চরিত্রের সৌন্দর্য অথবা অন্তরের পরিশুদ্ধি ইত্যাদি, এগুলো হচ্ছে এমন সব কর্মকাণ্ডের উদাহরণ যার কোনোটিই আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের কাছে চাওয়া বৈধ নয়। কোনো ফিরিশতা, নবী, পীরের কাছে চাওয়া, চাই তিনি জীবিত হোন অথবা মৃত, তাদের কাছে এ বলা জায়েয নয় যে, আমার পাপ ক্ষমা করুন, আমাকে আমার শত্রুর ওপর বিজয়ী করুন, আমার রোগ সুস্থ করুন, আমাকে ক্ষমা করুন অথবা আমার পরিবার-পরিজনকে বা আমার সওয়ারীকে নিরাপত্তা দিন, অনুরূপ বিষয়সমূহ। তাই যে এসব কিছু কোনো সৃষ্ট-জীবের কাছে চায় তাহলে সে তার রবের সাথে অংশীদার স্থাপনকারী সেসব মুশরিকদের ন্যায়, যারা ফিরিশতা, নবীগণ ও মূর্তির আকৃতি তৈরি করে তাদের ইবাদত করে। অনুরূপ তারা নাসারাদের ন্যায়, যারা মসীহ ও তার মাকে ডাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,﴿وَإِذۡ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ءَأَنتَ قُلۡتَ لِلنَّاسِ ٱتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيۡنِ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ ١١٦﴾ [المائدة: ١١٦] “স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ বলেন, হে ‘ঈসা ইবন মারইয়াম আপনি কি মানুষদের বলেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার মাকে দুই ইলাহ হিসেবে গ্রহণ কর?” [সূরা আল মায়েদা, আয়াত: ১১৬]
[কবর যিয়ারতের শর‘ঈ পদ্ধতি]
আর কবর যিয়াতের শর‘ঈ পদ্ধতি হলো, মৃতব্যক্তিকে সালাম দিবে এবং তার জন্য দো‘আ করবে, যেরূপে জানাযার সালাতে করা হয়, আর অনুরূপই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত করার সময় তাঁর সাহাবীগণকে শিক্ষা দিয়েছেন। যেন তারা বলে,
পরিচ্ছেদ[কোনো ব্যক্তি কর্তৃক নবী অথবা সৎকর্মপরায়ন ব্যক্তির কবরের কাছে আসা ও তার কাছে চাওয়া এবং তার দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা করার বিধান]
আর যে ব্যক্তি কোনো নবীর কবর অথবা সৎলোকের কবরের কাছে যায় অথবা এমন জায়গায় যায় যাতে এ বিশ্বাস করে যে, এটি কোনো নবীর কবর অথবা সৎ ব্যক্তির কবর, যদিও বাস্তবে তা নয় এবং তার কাছে কিছু চায় ও তার দ্বারা মুক্তি প্রার্থনা করে, তার এ কাজটি তিন প্রকার হতে পারে:প্রথম প্রকার: সে উক্ত নবী বা সৎলোকের কাছে তার প্রয়োজন পূরণের প্রার্থনা জানাবে। যেমন, সে তার রোগমুক্তি চাইবে অথবা চতুস্পদজন্তুর রোগমুক্তি কামনা করবে অথবা তার ঋণ পরিশোধ চাইবে অথবা তার দ্বারা তার শত্রু থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কামনা করবে অথবা তার নিজের বা তার পরিবার-পরিজন বা তার চতুস্পদ জন্তুর জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করবে অথবা অনুরূপ কিছু চাইবে যা মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ করতে সমর্থ নয়। বস্তুত এমন কিছু করা সুস্পষ্ট শির্ক। এ ধরনের ব্যক্তিদের তাওবা করে দীনে ইসলামে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হবে, অতঃপর যদি সে তাওবা করে ভালো, অন্যথায় তাকে বিচারের মাধ্যমে হত্যা করা হবে। আর যদি সে বলে: আমি তার কাছে চাচ্ছি; কেননা তিনি আমার চেয়ে আল্লাহ তা‘আলার অধিক নিকটবর্তী, যেন আমার এসব বিষয়ে তিনি আল্লাহর কাছে সুপারিশ করেন। কারণ, আমি তার দ্বারা আল্লাহর নিকট চাচ্ছি যেমনিভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে তার বিশেষ ও সহযোগীদের মাধ্যমে চাওয়া হয়। বস্তুত এ কাজগুলো মুশরিক ও নাসারাদের কাজ। কেননা তাদের ধারণা মতে তারা তাদের ধর্মীয়-পণ্ডিত ও পীর-দরবেশদেরকে সুপারিশকারী রূপে গ্রহণ করে থাকে এ আশায় যে তারা তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করতে সুপারিশ করবে। তাছাড়া মহান আল্লাহ মুশরিকদের বিষয়েও অবহিত করেছেন যে, তারা বলত:﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ ٣﴾ [الزمر: ٣] “আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যেই করি যে, এরা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দিবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত:৩]
[অন্যের কাছে দো‘আ চাওয়ার বিধান, সে ব্যক্তি জীবিত হোক কিংবা মৃত]
আর যদি তুমি বলো, এই নবী বা ওলী যখন আল্লাহকে ডাকবেন, তখন আল্লাহ তার ডাকে অধিক সাড়া দিবেন, আমি সরাসরি ডাকলে যে সাড়া পাবো না। বস্তুতই এটাই হলো দ্বিতীয় প্রকার।দ্বিতীয় প্রকার: তা হলো তুমি তার কাছ থেকে কোনো কাজ না চাইবে না এবং তাকে আহ্বানও জানাবে না, কিন্তু তাকে তুমি তোমার জন্য দো‘আ করতে বলবে। যেমন তুমি জীবিত কারও কাছে গিয়ে বলবে, ‘আমার জন্য দো‘আ কর।’ যেমনটি সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ দো‘আ প্রার্থনা করতেন। এটা জীবিতদের কাছে চাওয়া জায়েয, যেমনটি পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে; কিন্তু মৃত নবী, ওলী ও অন্যান্যদের কাছে দো‘আ চাওয়া জায়েয হবে না। সুতরাং এভাবে বলা জায়েয হবে না যে, ‘আমার জন্য দো‘আ কর।’ আর এটা বলাও জায়েয হবে না যে, ‘আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে কিছু চাও।’ কারণ সাহাবায়ে কেরাম ও তাবে‘ঈদের কেউ এমনটি করেন নি, এমনকি এমনটি করতে কোনো ইমামও নির্দেশ দেন নি। আর এ বিষয়ে কোনো হাদীসও আসে নি; বরং সহীহ হাদীসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, যখন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সময়ে অনাবৃষ্টি দেখা দিল তখন তিনি আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দ্বারা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। তিনি বলেছিলেন,
﴿إِنَّمَا يَعۡمُرُ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَلَمۡ يَخۡشَ إِلَّا ٱللَّهَۖ فَعَسَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ ٱلۡمُهۡتَدِينَ ١٨﴾ [التوبة: ١٨] “তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১৮]আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [الجن: ١٨] “আর নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য। কাজেই আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,«صلاة الرجل في الجماعة تفضل على صلاته في بيته وسوقه خمساً وعشرين درجة»“কোনো ব্যক্তির মসজিদে সালাত আদায় করা বাড়ী ও বাজার হতে পঁচিশ গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ।”[22]নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,«مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا بَنَى الله لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ»“যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোনো মসজিদ নির্মাণ করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন।” অথচ কবর, যাকে মসজিদ বানানোর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত আছে এবং যে এমন কাজ করবে তাকে তিনি অভিসম্পাত দিয়েছেন। যা একাধিক সাহাবী ও তাবে‘ঈও উল্লেখ করেছেন। যেমনটি ইমাম বুখারী রহ. তার সহীহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আর তাবরানী ও অন্যান্যরাও তাদের তাফসীরসমূহে বর্ণনা করেছেন। আর এ বিষয়টি ওয়াসিমা ও অন্যান্যগণ (কাসাসুল আম্বিয়া) গ্রন্থে আল্লাহ তা‘আলার নিন্মোক্ত বাণীর তাফসীরে বর্ণনা করেছেন:﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣﴾ [نوح: ٢٣] “আর তারা বলেছে, ‘তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে; পরিত্যাগ করো না ওয়াদ, সুওয়া‘আ, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে”। [সূরা নূহ, আয়াত: ২৩] তারা বলেছেন, “এসব হচ্ছে নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের নেককার ব্যক্তিবর্গের নাম। অতঃপর যখন তারা মারা গেলো তারা তাদের কবরের প্রতি আসক্ত হলো। তারপর দীর্ঘসময় তাদের ওপর অতিবাহিত হলো, অতঃপর তারা তাদের আকৃতিগুলোকে মূর্তিরূপে গ্রহণ করে। বস্তুত কবরের প্রতি তাদের আসক্তি, সেগুলোর স্পর্শ, চুম্বন ও কবরবাসীদের নিকট দো‘আ করা প্রভৃতিই হলো শির্কের মূল-ভিত্তি এবং মূর্তিপূজার গোড়ার কথা। আর একারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
আর তৃতীয় প্রকার হচ্ছে, এটা বলা, “হে আল্লাহ তোমার কাছে অমুকের সত্ত্বার বিনিময়ে অথবা অমুকের বরকতে অথবা আপনার কাছে অমুকের মর্যাদা দ্বারা, আমার জন্য এটা এটা কর।” এটা অধিকাংশ লোক করে থাকে। কিন্তু কোনো সাহাবী, তাবে‘ঈ ও এ উম্মাতের সালাফ বা গ্রহণযোগ্য পূর্বসূরী থেকে এটি বর্ণিত হয় নি যে তারা এ ধরনের দো‘আ করতো। আর আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো আলেমের পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়ে আসে নি, যা আমি পেশ করতে পারবো। তবে কেবল আমি ফকীহ আবু মুহাম্মদ ইবন আবদুস সালামের ফতোয়ায় দেখি যে, তিনি এ মর্মে ফাতওয়া দিয়েছিলেন যে, “কারোর ব্যাপারে (সত্ত্বা, বরকত, মর্যাদা ইত্যাদির মাধ্যমে চাওয়া) বৈধ নয়, তবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে যদি হাদীসটি বিশুদ্ধ হয়, তাহলে সেটি নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত থাকবে।” বস্তুত আবু মুহাম্মাদের এ ফাতওয়ায় বর্ণিত হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ হাদীসটি যা নাসাঈ ও তিরমিযী ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোনো এক সাহাবীকে যে দো‘আ শিখিয়েছেন, সেটি। সে দো‘আটি হচ্ছে,
[যে ব্যক্তি কোনো বিপদ ও ভয়ে পড়ে তার পীরের কাছে উদ্ধার চায় তার বিধান]
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির নিকট কোনো বিপদ অথবা কোনো বিষয়ে ভীত হয়ে সে তার পীরের মাধ্যমে উদ্ধার কামনা করে, যেন উক্ত আপতিত বিষয়ে তার অন্তর সুদৃঢ় থাকে, প্রকৃতপক্ষে এটা শির্কের অন্তর্গত। আর এটা নাসারাদের দীনের কর্মের মত। কেননা কেবলমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই রহমত বর্ষণ করেন ও অনিষ্ট দূর করেন। মহান আল্লাহ বলেন,﴿وَإِن يَمۡسَسۡكَ ٱللَّهُ بِضُرّٖ فَلَا كَاشِفَ لَهُۥٓ إِلَّا هُوَۖ وَإِن يُرِدۡكَ بِخَيۡرٖ فَلَا رَآدَّ لِفَضۡلِهِۦۚ يُصِيبُ بِهِۦ مَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦۚ وَهُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٧﴾ [يونس: ١٠٧]“আর যদি আল্লাহ আপনাকে কোনো ক্ষতির স্পর্শ করান, তবে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর যদি আল্লাহ আপনার মঙ্গল চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ প্রতিহত করার কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তার কাছে সেটা পৌঁছান। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৭]﴿مَّا يَفۡتَحِ ٱللَّهُ لِلنَّاسِ مِن رَّحۡمَةٖ فَلَا مُمۡسِكَ لَهَاۖ وَمَا يُمۡسِكۡ فَلَا مُرۡسِلَ لَهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِ﴾ [فاطر: ٢]“আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণকারী নেই এবং তিনি কিছু নিরুদ্ধ করতে চাইলে পরে কেউ তার উন্মুক্তকারী নেই।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২]﴿قُلۡ أَرَءَيۡتَكُمۡ إِنۡ أَتَىٰكُمۡ عَذَابُ ٱللَّهِ أَوۡ أَتَتۡكُمُ ٱلسَّاعَةُ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ تَدۡعُونَ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٤٠ بَلۡ إِيَّاهُ تَدۡعُونَ فَيَكۡشِفُ مَا تَدۡعُونَ إِلَيۡهِ إِن شَآءَ وَتَنسَوۡنَ مَا تُشۡرِكُونَ ٤١﴾ [الانعام: ٤٠، ٤١]“বলুন, ‘তোমরা আমাকে জানাও, যদি আল্লাহর শাস্তি তোমাদের ওপর আপতিত হয় বা তোমাদের কাছে কিয়ামত উপস্থিত হয়, তবে কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও ডাকবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? ‘না, তোমরা শুধু তাঁকেই ডাকবে, তোমরা যে দুঃখের জন্য তাঁকে ডাকছ তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের সে দুঃখ দুর করবেন এবং যাকে তোমরা তাঁর শরীক করতে তা তোমরা ভুলে যাবে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৪০, ৪১]﴿قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِهِۦ فَلَا يَمۡلِكُونَ كَشۡفَ ٱلضُّرِّ عَنكُمۡ وَلَا تَحۡوِيلًا ٥٦ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ وَيَرۡجُونَ رَحۡمَتَهُۥ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُۥٓۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحۡذُورٗا ٥٧﴾ [الاسراء: ٥٦، ٥٧] “বলুন, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে কর তাদেরকে ডাক, অতঃপর দেখবে যে, তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করার বা পরিবর্তন করার শক্তি তাদের নেই; তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে, আর তারা তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার রবের শাস্তি ভয়াবহ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৫৬, ৫৭]ফলে সুস্পষ্ট যে, ফিরিশতা, নবী কিংবা অন্যান্য যাদেরকে ডাকা হয়, তরা তাদের থেকে অনিষ্ট দুর করতে সক্ষম নয়। আর পরিবর্তনও করতে পারে না।সুতরাং যখন কারও বক্তব্য এটা হয় যে, আমি পীর সাহেবকে ডাকি যেন তিনি আমার জন্য শাফা‘আতকারী হন। তখন সেটা নাসারাদের দো‘আর অনুরূপ হবে। কেননা তারা মারইয়াম, তাদের পণ্ডিত ও দরবেশদের নিকট দো‘আ চাইত। অপরদিকে মুমিন তো কেবল তার প্রভুর কাছেই প্রত্যাশা করে, তাকেই ভয় করে এবং তাকেই একনিষ্ঠভাবে ইবাদতের জন্য ডাকে। আর ছাত্রের ওপর তার উস্তাদের হক হলো তার জন্য দো‘আ করা এবং তার ওপর রহমত প্রত্যাশা করা। কেননা সর্বশ্রেষ্ট মর্যাদাবান সৃষ্টি হলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর তার সাহাবীগণ তার নির্দেশাবলী ও মর্যাদা সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত এবং সর্বাধিক তার অনুগত্যপরায়ন মানুষ। তাদের মধ্য হতে কাউকে তিনি আশ্রয়ের ও ভয়ের সময় আদেশ করেন নি এটা বলতে: হে আমার নেতা! হে আল্লাহর রাসূল! (এটা বলে শাফা‘আত চাওয়ার নির্দেশ রাসূল দেন নি।)। আর সাহাবীগণের কেউই রাসূলের জীবদ্দশায় কিংবা মৃত্যুর পর এমনটি করেন নি; বরং তিনি তাদেরকে আল্লাহর যিকির ও দো‘আ পাঠ এবং তার ওপর সালাত ও সালাত পেশ করতে আদেশ দিয়েছেন। (যাতে আল্লাহর কাছে তাদের দো‘আ কবুল হয়, শাফা‘আত চাওয়ার মাধ্যমে নয়) দেখুন, কীভাবে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন বিপদে বলার জন্য। তিনি বলেন,﴿ٱلَّذِينَ قَالَ لَهُمُ ٱلنَّاسُ إِنَّ ٱلنَّاسَ قَدۡ جَمَعُواْ لَكُمۡ فَٱخۡشَوۡهُمۡ فَزَادَهُمۡ إِيمَٰنٗا وَقَالُواْ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ وَنِعۡمَ ٱلۡوَكِيلُ ١٧٣ فَٱنقَلَبُواْ بِنِعۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضۡلٖ لَّمۡ يَمۡسَسۡهُمۡ سُوٓءٞ وَٱتَّبَعُواْ رِضۡوَٰنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ ذُو فَضۡلٍ عَظِيمٍ ١٧٤﴾ [ال عمران: ١٧٣، ١٧٤]“এদেরকে লোকেরা বলেছিল, তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জড়ো হয়েছে, কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় কর; কিন্তু এ কথা তাদের ঈমানকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা তারপর তারা আল্লাহর নি‘আমত ও অনুগ্রহসহ ফিরে এসেছিল, কোনো অনিষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করে নি এবং আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট তারা তারই অনুসরণ করেছিল এবং আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কত উত্তম কর্মবিধায়ক!” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৩, ১৭]সহীহ বুখারীতে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় এ বাক্যগুলো ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার সময় বলেছিলেন। আর তা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ যখন তাদেরকে মানুষ বলেছিল যে, ‘নিশ্চয় মানুষ তোমাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে’ তখন তারা বলেছিলেন।অনুরূপভাবে সহীহ হাদীসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদের সময় বলতেন,«لا اله الا الله العظيم الحليم لا اله الا الله رب العرش الكريم لا اله الا الله رب السماوات الأرض ورب العرش العظيم»“আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোনো সত্য মা‘বুদ নেই যিনি মহান ও ধৈর্যশীল। তিনি ব্যতীত কেনো সত্য মা‘বুদ নেই তিনি সম্মানিত আরশের মালিক। আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোনো সত্য মা‘বুদ নেই, আসমান ও যমীনের রব এবং মহান আরশের রব।”[40]এমনকি কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, তিনি এ দো‘আটি তাঁর আহলে বাইত তথা পরিবারের কোনো কোনো সদস্যকেও শিখিয়েছেন।
[শির্কের প্রথম প্রকাশ]
বলা হয়ে থাকে যে, মক্কার যমীনে সর্বপ্রথম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পরে আমর ইবন লুহাই আল খুযা‘ঈর মাধ্যমে শির্কের প্রচলন হয়। যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামে নাড়ীভুড়ি টানা হেচড়া করছে দেখেছেন। সে সর্বপ্রথম সায়েবা (মূর্তির উদ্দেশ্যে প্রাণী) ছেড়েছিল এবং সর্বপ্রথম ইবরাহীমের দীনে পরিবর্তন সাধন করেছিল। ঐতিহাসিকগণ বলেন, সে শামে প্রবেশ করে সেখানকার ‘বলকা’ নামক স্থানে কতিপয় মূর্তি পেল, সেখানকার অধিবাসীরা ধারণা করছিলো যে, এগুলো তাদের উপকার করতে সমর্থ এবং অনিষ্ট দুর করতেও সক্ষম। তখন আমর ইবন লুহাই সে মূর্তিগুলোকে মক্কায় নিয়ে আসে এবং আরবদের জন্য শির্ক ও মূর্তিপূজার প্রচলন করে।আর ঐ সব কাজ যা আল্লাহ ও তার রাসূল হারাম করেছেন, যেমন শির্ক, জাদু, হত্যা, যিনা, মিথ্যা সাক্ষ্য ও মদপান প্রভৃতি নিষিদ্ধ কর্মসমূহ, কখনো কখনো এগুলোর মাধ্যমে কোনো কোনো ব্যক্তি বিশেষ কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত হয় যাকে সে উপকার লাভ কিংবা অপকার রোধের উপায় হিসাবে গণ্য করে থাকে। যদি এমনটি না হতো তবে কোনো অবস্থাতেই যেসব কাজে কোনো কল্যাণ নেই সেসব নিষিদ্ধ কাজে মানুষ প্রবৃত্ত হতো না। আর অজ্ঞতা অথবা প্রয়োজনই মানুষদেরকে কেবল নিষিদ্ধ কর্মে পতিত করে। পক্ষান্তরে খারাপ ও নিষিদ্ধ কর্ম সম্পর্কে অবহিত ব্যক্তি কিরূপে এটি করে? আর যারা এসব কাজে প্রবৃত্ত হয়, তারা কখনো কখনো এসবের মধ্যে যে বিপর্যয় রয়েছে তা সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার কারণে তা করে থাকে কিংবা তাদের প্রয়োজন থাকায় তারা তাতে পতিত হয়। যেমন, সেগুলোর প্রতি প্রবৃত্তির আকর্ষণ। অথচ কখনো কখনো তাতে যে লাভ রয়েছে তা থেকে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি, কিন্তু তরা তা সম্পর্কে অবগত নয়। অজ্ঞতার কারণে অথবা প্রবৃত্তি তাদের ওপর এমনভাবে বিস্তার করে যে শেষ পর্যন্ত তারা সে অন্যায় কাজটি করে বসে। আর অধিকাংশ সময় প্রবৃত্তি চাহিদা ব্যক্তিকে এমন বানিয়ে ফেলে যে, সে সত্য সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে সক্ষম হয় না। কেননা কোনো বিষয়ে তোমার ভালোবাসা সেটার ব্যাপারে তোমাকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে ফেলে। আর একারণে আলেম বা দীনের জ্ঞানী ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে। আবুল ‘আলিয়া বলেন, আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথীদেরকে মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম,﴿إِنَّمَا ٱلتَّوۡبَةُ عَلَى ٱللَّهِ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسُّوٓءَ بِجَهَٰلَةٖ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٖ﴾ [النساء: ١٧]“আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের তাওবাহ কবুল করবেন যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে এবং তাড়াতাড়ি তাওবাহ করে” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭] তারা বলল: যে কেউই আল্লাহর অবাধ্য হয় সে অজ্ঞ বলে বিবেচিত। আর যে কেউ মৃত্যুর পূর্বে তাওবা করবে, সে তাড়াতাড়ি তাওবা করেছে বলে বিবেচিত হবে। বস্তুত এটা নিষিদ্ধ বিষয়ে যে সব অগ্রাধিকারসম্পন্ন অপকারিতা এবং নির্দেশিত বিষয়ে যে সব অগ্রাধিকারসম্পন্ন উপকারিতা রয়েছে তা বিস্তারিত বর্ণনার স্থান নয়; বরং মুমিনের জন্য এটা জানাই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তা‘আলা যা আদেশ করেছেন তাতে রয়েছে নিশ্চিত গ্রহণযোগ্য স্বার্থ প্রাধান্যপ্রাপ্ত স্বার্থ। আর যা থেকে আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছেন তাতে রয়েছে নিশ্চিত বিপর্যয় অথবা প্রাধান্যপ্রাপ্ত বিপর্যয়। আর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে যখন কোনো আদেশ করেন তখন তা আল্লাহর কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য করেন না, অনুরূপভাবে যখন কোনো নিষেধ করেন তখন সে বিষয়ে তার কৃপণতার জন্য করেন না, বরং তাদেরকে সেটার আদেশই করেন, যাতে তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে এবং সেটা থেকেই নিষেধ করেন, যাতে তাদের জন্য বিপর্যয় রয়েছে। আর এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গুণান্বিত বলেছেন যে,﴿يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ﴾ [الاعراف: ١٥٧]“যিনি তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দেন, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন, তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭]
[কবর স্পর্শ করা ও চুম্বন করা এবং গালের পার্শ্বদেশ কবরের ওপর লাগানোর বিধান বর্ণনা]
আর কবর স্পর্শ করা, সেটা যার কবরই হোক না কেন, আর কবরকে চুম্বন করা ও তাতে গালের পার্শ্বদেশ লাগানো সকল মুসলিমদের ঐকমত্যে নিষেধ করা হয়েছে। যদিও তা কোনো নবীর কবরই হোক না কেন। আর এই উম্মাতের পূর্বসূরী ও ইমামগণের কেউ এটা করেন নি, বরং এটা শির্কের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣ وَقَدۡ أَضَلُّواْ كَثِيرٗاۖ ٢٤﴾ [نوح: ٢٣، ٢٤]“আর তারা বলেছে, ‘তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে; পরিত্যাগ করো না ওয়াদ, সুওয়া‘আ, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে। ‘বস্তুত তারা অনেককে বিভ্রান্ত করেছে”। [সূরা নূহ, আয়াত: ২৩-২৪]আর পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এসব নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের সৎর্কমপরায়ন ব্যক্তিদের নাম। আর তারা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঐসব কবরের উপর অবস্থান করেছিল। অতঃপর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর তারা সেসবের মূর্তি বানালো। বিশেষ করে যখন তারা এসবের সাথে মৃতের কাছে দো‘আ ও তার মাধ্যমে উদ্ধার প্রার্থনাকে যোগ করলো। পূর্বেই এসম্পর্কে বর্ণনা অতিবাহিত হয়েছে এবং সেখানে যে শির্ক রয়েছে তারও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এবং (বিদ‘আতী যিয়ারত) যা খৃস্টানদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও (শর‘ঈ যিয়ারতের) পার্থক্য স্পষ্ট করা হয়েছে।
[পীরদের সামনে মাথা নোয়ানো ও মাটি চুম্বন করার বিধান]
আর বড় বড় পীর ও অন্যান্যদের নিকট মাথা নোয়ানো অথবা মাটি চুম্বন করা ইত্যাদি নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। বরং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতিত অন্য কারো জন্য সামান্য পিঠ বাঁকা করে ঝুঁকে পড়া থেকেও নিষেধ করা হয়েছে।মুসনাদ ও অন্যান্য গ্রন্থে এসেছে যে, যখন মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু শাম দেশ থেকে ফিরে আসলেন তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাজদাহ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এটা কি হে মু‘আয? উত্তরে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমি সিরিয়াতে তাদেরকে দেখেছি যে তারা তাদের পাদ্রী ও বিশপকে সাজদাহ করছে, আর তারা তাদের নবীদের থেকেও অনুরূপ উল্লেখ করে থাকেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
[তথাকথিত কুতুব, গাউস ও পূণ্যবান ব্যক্তির রহস্য উন্মোচন]
আর প্রশ্নকর্তা কুতুব, গাউস ও পূণ্যবান ব্যক্তি সম্পর্কে যে প্রশ্ন করেছে, তার উত্তর হচ্ছে, এসব বিষয় কোনো কোনো লোক সাব্যস্ত করে থাকে, তারা এগুলোর ব্যাখ্যা এমন কিছু দিয়ে করে থাকে যা দীন ইসলামে বাতিল বলে গণ্য। যেমন, গাউস সম্পর্কে তাদের কারো কারো ব্যাখ্যা হলো: তিনি এমন ব্যক্তি যিনি হবেন সৃষ্টিজগতের সাহায্যকারী, যার মাধ্যমে সৃষ্টিজগৎ সাহায্য ও রিযিক প্রাপ্ত হয়। এমনকি এটাও বলে থাকে যে, ফিরিশতাদের সাহায্য ও সমুদ্রের মাছের রিযিক ইত্যাদিও তার মাধ্যমে হয়। বস্তুত এটা হলো ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে নাসারাদের বক্তব্যের মতো এবং আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের বক্তব্যের অনুরূপ বক্তব্য। আর এটা সুস্পষ্ট শির্ক, যে ব্যক্তি তা বলবে, তাকে তা থেকে তাওবা করার জন্য বলা হবে। সুতরাং যদি সে তাওবা করে তাহলে ভালো, অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে। কেননা সৃষ্টিজগতের কাউকেই, ফিরিশতা হোক কিংবা মানুষ, তাকে এ ব্যক্তির মাধ্যমে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয় না।আর এই কারণেই দার্শনিকগণ যে ‘দশ আকল’ বা বুদ্ধিভিত্তিক দশ ব্যক্তিত্ব, যাদেরকে তারা ফিরিশতা মনে করে থাকে, অনুরূপভাবে নাসারাগণ মসীহ সম্পর্কে যা বলে থাকে, তা সাব্যস্ত করা মুসলিমদের ঐকমত্যে সুস্পষ্ট শির্ক।আর যদি সে লোকটি বলে, আমি ‘গাউস’ দ্বারা বুঝাই, যা তাদের কেউ কেউ বলে থাকে যে, জমিনে তিন শত দশের অধিক মানুষ রয়েছে। যাদেরকে তারা নামকরণ করেছেন নূজাবা হিসেবে। অতঃপর সেখান থেকে সত্তর জন হলো নাক্বীব, তাদের মধ্য হতে চল্লিশজন আবদাল, তাদের মধ্য হতে সাতজন আক্বতাব, আর তাদের মধ্যে চারজন আওতাদ, তাদের মধ্যে একজন হলো গাউস, আর তিনি স্থায়ীভাবে মক্কার অধিবাসী। আর যমীনবাসী যখন তাদের রিযিক কিংবা বিপদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তখন তারা সেসব তিনশত দশজনের অধিক মানুষের স্মরণাপন্ন হয়, আর তারা (৩১০ এর অধিক লোক) ঐসব সত্তরজনের কাছে আশ্রয় চায়, আর সত্তরজন চল্লিশজনের কাছে, চল্লিশজন সাতজনের কাছে, সাতজন চার জনের কাছে এবং চারজন একজনের স্মরণাপন্ন হয়। আবার তাদের কেউ কেউ এ লোকদের সংখ্যা, নামসমূহ ও মর্যাদার ব্যাপারে বেশি-কম করে বর্ণনা করে থাকে। কেননা এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য অনেক; এমনকি তাদের কেউ কেউ বলে থাকে, আকাশ থেকে সমকালীন গাউসের নামখচিত লেখা সবুজ কাগজ কা‘বার ওপর অবতীর্ণ হবে। যার নাম হবে খুদরাহ বা সবুজ। এমনকি তাদের কারও কারও নিকট ‘খাদরাহ’ নামক একটি মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বও রয়েছে। আর প্রত্যেক যুগেই খাদরাহ বা খিদির নামে একজন আছেন। বস্তুত এব্যাপারে তাদের মধ্যেই দু‘ধরনের বক্তব্য রয়েছে। তবে সত্য কথা এই যে, এ সব কিছু সম্পূর্ণ বাতিল ও মিথ্যা। আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতে যার কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি এ উম্মতের পূর্বসূরীদের কেউ ও কোনো ইমাম এ জাতীয় কোনো কথা বলেন নি। আর পূর্ববর্তী বড় শাইখ যাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করার যোগ্য মনে করা হয়, তাদের কেউই এমন কিছু বলেন নি।এখানে সুস্পষ্ট যে, আমাদের নেতা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর, উমার, ওসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম ছিলেন তাদের যুগের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আর তারা ছিলেন মদিনাতে, তারা কেউই মক্কাতে ছিলেন না।আর তাদের কেউ কেউ সাহাবী মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দাস হিলাল সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণনা করে বলেন যে সে নাকি তথাকথিত পূর্বোক্ত সাতজনের একজন। অথচ হাদীসটি এ শাস্ত্রের পণ্ডিত ব্যক্তিদের ঐকমত্যে বাতিল। যদিও আবু না‘ঈম রহ. তার ‘হিলইয়াতিল আউলিয়া’ গ্রন্থে এ জাতীয় কিছু হাদীস উল্লেখ করেছেন। আর শাইখ আবু আবদুর রহমান আস-সুলামীও তার কোনো কোনো লেখনীতে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তুমি এগুলো দেখে ধোঁকা খেও না। কারণ, এসব গ্রন্থে সহীহ, হাসান, দুর্বল এমনকি বানোয়াট হাদীসও রয়েছে। আর আলেমগণের যে ব্যাপারে মতবিরোধ নেই তা হচ্ছে, মিথ্যা-বানোয়াট হাদীসই হচ্ছে মওদু‘ হাদীস। আর এসব গ্রন্থকার কখনো কখনো হাদীসশাস্ত্রের পণ্ডিতদের মত যা শুনেন তাই বর্ণনা করে থাকেন। তারা সেগুলোর কোনোটি সহীহ ও কোনোটি বাতিল তা নির্ণয় করে দেন না, কিন্তু কোনো গ্রহণযোগ্য হাদীসবিদ এ জাতীয় হাদীস বর্ণনা করেন না। কারণ, সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা এসেছে যে, তিনি বলেন,
[খিযির আলাইহিস সালাম সম্পর্কে চূড়ান্ত কথা]
সত্যনিষ্ঠ আলেমদের নিকট সঠিক বক্তব্য হলো খিদির আলাইহিস সালাম মৃত। তিনি ইসলাম পান নি। যদি তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে অবশিষ্ট থাকতেন তাহলে অবশ্যই তার জন্য ওয়াজিব হতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঈমান আনা এবং তার সাথে জিহাদ করা। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর ও অন্যান্যদের ওপর এটা ওয়াজিব করেছেন। আর তিনি অবশ্যই মক্কা-মদীনায় অবস্থান করতেন। কাফির সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত থেকে তাদের জাহাজ মেরামত করার চেয়ে সাহাবীগণের সাথে উপস্থিত থেকে সংগ্রাম করা এবং দীনের সাহায্য সহযোগিতা করা তার জন্য উত্তম হতো। তিনি এমন মানুষদের থেকে দূরে অবস্থান করতেন না যাদেরকে উত্তম জাতি হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। আর তাদের থেকে গোপনও থাকতেন না।তাছাড়া মুসলিমদের জন্য তাদের দীন ও দুনিয়ার কোনো বিষয়ে খিদির ও তার মতো কোনো অনুরূপ কোনো লোকের প্রয়োজনও নেই। কেননা মুসলিমগণ তো তাদের দীন সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করেছেন। যিনি তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দিয়েছেন। আর তাদেরকে তাদের নবী বলেছেন:«لو كان موسى حيا بين أظهركم ما حل له إلا أن يتبعنى»“যদি মূসা জীবিত থাকতো অতঃপর তোমরা তাকে অনুসরণ করতে আর আমাকে ছেড়ে দিতে তাহলে অবশ্যই তোমরা পথভ্রষ্ট হতে।”[55]আর ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম আকাশ থেকে যখন অবতীর্ণ হবেন তখন তিনি একমাত্র আল্লাহর কিতাব ও নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত দ্বারা বিচার-ফয়সালা করবেন। তাহলে খিদির ও অন্যন্যদের কী প্রয়োজন থাকতে পারে? আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশ থেকে ঈসা আলাইহিস সালাম এর প্রত্যাগমণ সম্পর্কে ও মুসলিমদের সাথে তার উপস্থিতির বিষয়টি তাদেরকে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন,«كيف تهلك أمة أنا أولها وعيسى ابن مريم آخرها؟»“কীভাবে ধ্বংস হবে একটি উম্মত, যার শুরুতে আমি রয়েছি আর তার শেষে রয়েছে ঈসা ইবন মারইয়াম।”[56]তাহলে যখন উপরোক্ত দু’জন নবী, (মুহাম্মাদ ও ঈসা) যারা মূসা, ইবরাহীম ও নূহসহ সর্বোত্তম রাসূল হিসেবে বিবেচিত আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইইহ ওয়াসাল্লাম আদম সন্তানদের নেতা, এরা কেউই এ উম্মত থেকে গোপনে অবস্থান করেন নি, সাধারণ ও বিশেষ কারও থেকেই নয়, তাহলে এমন কেউ কীভাবে এ উম্মত থেকে গোপনে অবস্থান করতে পারেন যিনি তাদের মত নন? (অর্থাৎ খিদির, কারণ তিনি তাদের মতো নন)। আর যদি খিদির সর্বদা জীবিতই ছিলেন তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তার নাম উচ্চারণ কেন করেন নি, তার সর্ম্পকে তার উম্মাতকে কেন কোনো সংবাদ দেন নি এবং তার সঠিক পথপ্রাপ্ত খলিফাগণও কেন কিছু বলেন নি?
[যুগের কাউকে কুতুব ও গাউস নামে আখ্যায়িত করার বিধান]
আর যদি প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের দ্বারা উদ্দেশ্য হয়, কুতুব, গাউস ও অন্যান্য পূণ্যবান ব্যক্তি, যিনি তৎকালীন সময়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলে বিবেচিত, তাহলে এটা তার উদ্দেশ্য হওয়া সম্ভব; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একই সময়ে দু’জন সমমর্যাদার লোক থাকা অসম্ভব নয়, অনুরূপভাবে তিনজন ও চারজনও থাকতে পারে। সুতরাং কোনো সময়ে উত্তম ব্যক্তি একজনই হবেন এমনটি দৃঢ়ভাবে বলা কখনই সম্ভব নয়। বরং একদল লোক এমন হতে পারেন যাদের কেউ অপর কারও থেকে একদিকে উত্তম হবেন, অন্যজন অপরদিক থেকে উত্তম হবেন। এ বিষয়গুলো কাছাকাছি পর্যায়ের কিংবা সমপর্যায়ের।
এ কিতাবটিতে কবর যিয়ারতের পদ্ধতি, বৈধ ও অবেধ অসীলা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে লেখক ওসীলা ও দো‘আ সংক্রান্ত প্রচলিত কতিপয় প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, এমনকি কুতুব, গাউস ও পূণ্যবান ব্যক্তিদের বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।
[1] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫১৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং (১/৩০৭ ও ১০/২৯৩, ৩০৩)
লেখক: শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহঅনুবাদ: ড. আব্দুর কাদেরসম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়াসূত্র: ইসলামহাউজx
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন