ঈদে মীলাদুন্নবীর আবিষ্কারক কে ?


মূলত তথাকথিত মীলাদুন্নবী নামক প্রথাটির সূচনা হয়েছিল রাসূল সা. এর জন্ম তারিখে খানাপিনা উৎসবের একটি বিদআতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে; যার আয়োজক ছিল এক অপব্যায়ী বাদশা এবং তার এক কাজ্জাব দরবারী আলেম। অনুসন্ধানে জানা যায়, ৬০৪ হিজরী সনে সাহিবুল ইবরিল (ইরাকের ইবরিলের শাসনকর্তা) বাদশাহ আবু সাঈদ মুযাফফর কাওকাবুরীর মাধ্যমে এই মীলাদ প্রথাটি সুন্নী সমাজে সর্বপ্রথম অনুপ্রবেশ করে। তিনি এবং তার দরবারী আলেম শায়খ আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে দিহইয়া [মৃত্যু-৬৩৩ হি.] মিলে এই মীলাদ প্রথাটি চালু করেছেন তথাকথিত  সুন্নিদের মাঝে। এ বিষয়ে সকল ঐতিহাসিকগণ একমত। হাফেয ইবনে কাসীর, ইবনে খাল্লিকান, হাফেয ইবনে হাজার ও আল্লামা সুয়ূতী রহ. প্রমূখ এ বিষয়ে একমত। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ, ১৩/১৯০]
এর পূর্বে সর্বপ্রথম তা আবিষ্কৃত হয় মিসরের ইসমাঈলীয় শিয়াদের হতে। সেটা লম্বা ইতিহাস। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা তাকী উদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে আলী আল মাকরিযী রহ. তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘‘আল খিতাত’’ এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। আল খিতাত কিতাবটির কায়রো থেকে ১৯৯৭ সনে প্রথম সংস্করণ বের হয়। এছাড়াও আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে বাখীত আল মূতী রহ. তাঁর ‘‘আহসানুল কালাম’’ কিতাবে এবং আল্লামা আলী মাহফূয রহ.ও এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সেটা ছিল প্রথম আবিষ্কার। কিন্তু সুন্নীদের মাঝে প্রথম আবিষ্কার করে ইবরিলের শাসনকর্তা আল মুযাফফর এবং তার দরবারী আলেম আবুল খত্তাব মিলে।
হাফেয ইবনে কাসীর লেখেছেন:
ﻭﻗﺪ ﺻﻨﻒ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺍﺑﻦ ﺩﺣﻴﺔ ﻟﻪ ﻣﺠﻠﺪﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ﺍﻟﻨﺒﻮﻱ ﺳﻤﺎﻩ ﺍﻟﺘﻨﻮﻳﺮ ﻓﻲ ﻣﻮﻟﺪ ﺍﻟﺒﺸﻴﺮ ﺍﻟﻨﺬﻳﺮ ‏، ﻓﺄﺟﺎﺯﻩﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﺑﺄﻟﻒ ﺩﻳﻨﺎﺭ... ﺣﻜﻰ ﺑﻌﺾ ﻣﻦﺣﻀﺮ ﺳﻤﺎﻁ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮ ﻓﻲﺑﻌﺾ ﺍﻟﻤﻮﺍﻟﺪ ﻛﺎﻥ ﻳﻤﺪ ﻓﻲ ﺫﻟﻚﺍﻟﺴﻤﺎﻁ ﺧﻤﺴﺔ ﺁﻻﻑ ﺭﺃﺱﻣﺸﻮﻱ، ﻭﻋﺸﺮﺓ ﺁﻻﻑ ﺩﺟﺎﺟﺔ،ﻭﻣﺎﺋﺔ ﺃﻟﻒ ﺯﺑﺪﻳﺔ، ﻭﺛﻼﺛﻴﻦ ﺃﻟﻒﺻﺤﻦ ﺣﻠﻮﻯ
অর্থ : উক্ত দরবারী আলেম আবু খাত্তাব বিন ওমর বিন দিহয়া বাদশাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মিলাদ মাহফিলের বৈধতা প্রদান করে ‘আততানবীর ফী মাওলিদিসসিরাজিম মুনীর’ (যার অর্থ: নবীজীর মীলাদ মাহফিলের নূর) নামে একটি গ্রন্থও রচনা করে। যার ফলে উক্ত বাদশাহ তাকে এক হাজার দিনার বখশীশ প্রদান করেন। ...বর্ণিত আছে, এই বাদশাহর কোনো কোনো ঈদে মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে পাঁচ হাজার ভূনা মাথা, দশ হাজার মুরগী এবং ত্রিশ হাজার হালুয়া বা মিষ্টির পাত্র থাকতো। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ, ১৩/১৯০; তারীখে ইবনে খাল্লিকান, ৪/১১৮-১৯]
ইমাম যাহাবী (রহ.) লিখেছেন- ﻭﻗﺎﻝ ﺳﺒﻂ ﺍﻟﺠﻮﺯﻱ ﻛﺎﻥ ﻣﻈﻔﺮﺍﻟﺪﻳﻦ ﻳﻨﻔﻖ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ﺛﻼﺙ ﻣﺎﺋﺔ ﺃﻟﻒ ﺩﻳﻨﺎﺭ অর্থাৎ ইমাম আল জাওযী বলেন, মুযাফফর উদ্দীন প্রতি বছর মীলাদ মাহফিলের জন্য তিন লাখ দীনার খরচ করতো। [সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ২০/৩৩৬]
আর উক্ত আলেম সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহ. লিখেন-
كثير الوقيعة في الأئمة وفي السلف من العلماء خبيث اللسان أحمق شديد الكبر قليل النظر في أمور الدين متهاونا
সে পূর্ববতী ইমাম ও আলেম উলামাদের সাথে বেয়াদবীমূলক আচরণ করতো। সে অশ্লীলভাষী, প্রচন্ড নির্বোধ, অহংকারী, দ্বীন সম্পর্কে সংকীর্ণমনা ও অলস ছিল। [লিসানুল মিযান, ১/৩৩৮]
সুতরাং বুঝা গেল এ প্রচলিত মিলাদ মাহফিল রাসূল ও সাহাবা-তাবেয়ী ও তবে-তাবেয়ীগণ কর্তৃক প্রচলিত বিষয় নয়। এটি একটি মিথ্যুক ব্যক্তির সেচ্ছাচারিতার ফসল। তাই এটি পরিত্যাজ্য বিদআত। যদিও দরূদ পড়া খুবই সওয়াবের কাজ। কিন্তু এর সাথে আরো অনেক শরীয়ত গর্হিত বিষয়ের অনুপ্রবেশ হবার কারণে উক্ত প্রচলিত পদ্ধতির মিলাদ মাহফিল বিদআত, এতে কোন সন্দেহ নেই।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সয়তান ও নারীর চক্রান্ত

হিন্দুস্তানের যুদ্ধ - গাযওয়াতুল হিন্দ

জিহাদ ''হাদিসের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তির জবাব''