জিহাদ ''হাদিসের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তির জবাব''
*** রক্তের সমুদ্রে ভাসছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর । জাতি হয়তো আরেকটি ফিলিস্তিন দেখার দ্বারপ্রান্তে । এখানেও কার্যত আমাদের ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছেনা । আমাদেরকে কেবল অশ্রুসজল নয়নে দেখে যেতে হচ্ছে । ভারত সরকার হত্যা/ লুন্ঠন / ধর্ষণ করে সুস্পস্টভাবে জুলুম / অত্যাচার করে চলেছে । এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই । এখানেও সেই ধারাবাহিকতায় মুসলিম বিশ্ব দর্শকের গ্যালারিতে উপবিষ্ট ! কাপুরষতার মখমল চাদরে আবৃত ! নূন্যতম প্রতিবাদও নেই ! দূর্বলতা ও অপারগতা বিষয়ে তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন । এখানে কোন কমেন্ট করার অধিকার আমার নেই । প্রয়োজনে বরং ৭১ সালের শোকরানা স্বরুপ বাংলাদেশ সরকার কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে ভারতকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করতে প্রস্তুত !
এতেও আমি চুপ! বাংলাদেশকে যদি শোকরানা স্বরুপ ইন্ডিয়াকে গিফট করা হয় তখনও হয়তো ফতুয়া আসবে যেহেতু শাসক গিফট দিয়েছে এখন যদি আমরা হিন্দুও হয়ে যাই তাতেও কোন দোষ নেই!
হাজার হোক গিফট তো শাসকই দিয়েছেন, শাসকের আনুগত্য করা তো ফরয! তাইনা?
.
*** কাশ্মীরিদের এ বিপদের মূহুর্তে আমাদের কি করণীয় ? ওখানে গিয়ে সরাসরি জেহাদে নেমে পড়া ? দেশে মিছিল/ মিটিং করা ? নাকি শুধু দোয়া করা?
.
*** কাশ্মীরিদের পক্ষে ফেইসবুকে লিখতে গেলে বা পোস্ট দিলে ফেইসবুক মুজাহিদ কীবোর্ড মুজাহিদ টাইটেল প্রদান ! উপহাসের সূরে জেহাদে যাওয়ার আহবান করা ইত্যাদি বাণী সমূহ কতোটুকু শরিয়ত সম্মত ? এ জাতীয় সমালোচনা তাঁদের মধ্যে পুষে থাকা ইসলাম বিরোধী মনোভাবের বহি:প্রকাশ কিনা ? কাফেরদের জন্য উস্কানি স্বরুপ কিনা ? নিজেদের ঈমানের দূর্বলতার পরিচয় কিনা ? নীরব মুসলিম বিশ্বের প্রতি অঘোষিত অন্ধ সমর্থন কিংবা তেল মারার পদ্বতি কিনা? এভাবে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এবং দিয়ে যাচ্ছে !
.
*** আসুন প্রিয় ভায়েরা উত্তর অনুসন্ধানের চেষ্টা করি ........
আল্লাহ বলেন,,
وَ مَا لَکُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ الۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ ہٰذِہِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَہۡلُہَا ۚ وَ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۚۙ وَّ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ نَصِیۡرًا ﴿ؕ۷۵﴾
আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী। ৪/৭৫
.
এই আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে মুমিনদেরই আদেশ দিয়েছেন তারা যেন মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করে যেখানেই মুসলিমরা নির্যাতিত হোক না কেন। এই আয়াতে আল্লাহ শুধুমাত্র কোন শাসকের উদ্যেশ্যে জিহাদের আদেশ দেননি।
তাফসিরে ইবনে কাসীর দ্রঃ।
.
আরো কয়েকটি আয়াত নিচে দেওয়া হলো…
.
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا۟ وَجَٰهَدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ
তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ। হুজরাত/১৫
.
تُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمْوَٰلِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। ৬১/১১
.
لٰکِنِ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ جٰہَدُوۡا بِاَمۡوَالِہِمۡ وَ اَنۡفُسِہِمۡ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَہُمُ الۡخَیۡرٰتُ ۫ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۸۸﴾
কিন্তু রাসূল ও তার সাথে মুমিনরা তাদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করে, আর সে সব লোকের জন্যই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম।৯/৮৮
.
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تُتۡرَکُوۡا وَ لَمَّا یَعۡلَمِ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ جٰہَدُوۡا مِنۡکُمۡ وَ لَمۡ یَتَّخِذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ لَا رَسُوۡلِہٖ وَ لَا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَلِیۡجَۃً ؕ وَ اللّٰہُ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿٪۱۶﴾
তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ এখনও আল্লাহ যাচাই করেননি যে, তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ ছাড়া কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেনি। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। ৯/১৬
.
উপরের কয়েকটি আয়াত থেকে যে বিষয়গুলো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় তা হলো,,
ঈমানদার হওয়ার একটি শর্ত হল জিহাদ করা।
সফল তথা জান্নাতে যেতে হলে অবশ্যই জিহাদ করতে হবে।
জিহাদ ইগনোর করে ঈমানের দাবী করা সুস্পষ্ট মুনাফেকি।
.
কোরআন কারিমে এরকম শত শত আয়াত রয়েছে যার মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য জিহাদ করাকে ফরয করা হয়েছে।
কেউ যদি আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে উত্তম আমল এইই জিহাদ নিয়ে মশকরা বা বিদ্রুপ করে বা অপছন্দ করে তাহলে সুনিশ্চিতভাবে তারা কাফির হয়ে যাবে।
.
আল্লাহ বলেন-
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ
এটা এ জন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিয়েছেন। (মুহাম্মদ, ৪৭/৯)
.
আল্লাহ বলেন-
قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ لا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ
তুমি বল, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর আয়াতসমূহের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? তোমরা ওযর পেশ কর না, তোমরা ঈমান আনার পরও অবশ্যই কুফরী করেছ।
(আত্-তাওবাহ, ৯/৬৫-৬৬)
**** একটি ছহীহ হাদিসে রাসুল (ﷺ) বলেছেন,,
.
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ
فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ .
তোমাদের কেউ যদি অন্যায় কাজ দেখে, তাহলে সে যেন হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি এর ক্ষমতা না থাকে, তাহলে মুখের দ্বারা, যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তর দ্বারা (উক্ত কাজকে ঘূণা করবে), আর এটাই ঈমানের নিম্নতম স্তর।
.
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) হাদিস নং ৮৩
.
এই হাদিসের ভিত্তিতে আমরা হাত দিয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছি, যখন হাত দিয়ে পারি না তখন মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করছি, যখন এ দুটোর একটিও পারি না তখন অন্তর থেকে ঘৃণা করছি।
এই তিনটির ক্রমানুসারে কাফিরদের বিরোদ্ধে জিহাদ করতে হবে, করতে আপনি আমি বাধ্য ।
.
কিন্তু আমরা কি করছি আজ ?
কখনো আক্বীদা/ কখনো মানহাজের প্রশ্ন তুলে কাশ্মীরিদের পক্ষে দুকলম লিখতেও মন চায় না ! যাঁরা লিখেন, তাঁদের নিয়ে ফতওয়া প্রসব করছি ! অদৃশ্য কারণে যা খুশি তাই ডেলিভারি দিয়ে যাচ্ছি ! নিজেদের অবস্থানকে হক্ব বলে দাবী করছি !
আসলে কি আমরা হক্বের উপর আছি ? নাকি কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি ? নাকি শয়তানের ইবাদতে মশগুল হয়ে আছি?
.
*** উল্লেখিত হাদিসটি কি বলে ?
.
উপরের হাদিসটিতে রাসুল সঃ আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন আমরা যেন অন্যায় কাজকে নিজের দুহাত দ্বারা প্রতিহত করি, যদি হাত দিয়ে সরাসরি প্রতিবাদ করার সুযোগ বা ক্ষমতা না থাকে তাহলে অন্য দু অপশন তো আছেই!
যে ব্যক্তি মুখ বা কলমের মাধ্যমে জুলুমের প্রতিবাদ করার সামর্থ রাখা সত্ত্বেও তা করবেনা ! শরিয়তে তাঁর অবস্হান কি হবে?
কলম দিয়ে প্রতিবাদ করা কি জিহাদের ফরয পালন হচ্ছে না?
কলমে প্রতিবাদ করলেই কি সরাসরি জেহাদের ময়দানে যাওয়া ফরজ হয়ে যায় ? তাহলে রসুল (ﷺ) তিন ভাগে ভাগ করলেন কেন ?
এটা তো ওমরা পালন করলেই হজ্ব ফরজ হয়ে যাওয়ার বানোয়াট ফতওয়া সদৃশ ! প্রকৃতপক্ষে এসব ভাওতাবাজি শুধুমাত্র নিজেদের পিঠ বাঁচানো এবং শয়তানকে খুশি করার জন্য এক শ্রেণীর লোকদের প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয় !
*** শরিয়তের আদেশ হলো যে, নিজের সামর্থ অনুযায়ী প্রতিবাদ করা । আমি যেখানে থাকি সেখানে মিছিল/ মিটিং নিষিদ্ধ । তাই অত্যন্ত সতর্কতার মধ্যে দিয়ে কাশ্মীরিদের পক্ষে দু কলম লেখার চেষ্টা করে থাকি। যেটা উপরে বর্ণিত সহিহ হাদিসের সেকেন্ড নির্দেশনা। কিন্তু এখানেও বাধা! কেন?
এই হাদিস কি সহিহ নয়? কাফির মুশরিকদের বিরোদ্ধে রাসুলের নির্দেশিত ৩ স্তরের জিহাদের কোনটিতে আপনারা আছেন? পছন্দ হয়না রাসুলের কথা? কার স্বার্থে রাসুলের (ﷺ) সঃ সরাসরি বিরোধিতা?
শয়তানকে খুশি করতে বুঝি? আল্লাহর কাছে কি জবাবদিহি করতে হবে না?
কখনো এ প্রশ্নগুলো নিয়ে ভেবেছেন?
.
*** বাংলাদেশে যদি কাশ্মীরিদের পক্ষে মিছিল/ মিটিং করার ক্ষেত্রে জনসাধারণ বা জনসম্পদের ক্ষতি না হয় এবং প্রশাসনের কঠোর বাঁধা - বিপত্তির সম্মূখীন হতে না হয়, এমতাবস্হায় সমাবেশের মাধ্যমে প্রতিবাদ করা বাংলাদেশে অবস্থিত প্রতিটি সক্ষম মুসলিমের জন্য ওয়াজীব । হাদিসের অনুবাদ এটাই ।
..
***এখন প্রশ্ন হল শাসকের অনুমতি ছাড়া কি জিহাদ করা হারাম?
.
***যেসব হাদিসগুলোতে শাসকের আনুগত্য করার নির্দেশনা এসেছে সেগুলো আগে দেখে নিই তাহলেই বুঝতে সুবিধা হবে জিহাদ করতে শাসকের অনুমতি লাগে কি না!"
--
*** জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতিকে যারা শর্ত হিসেবে ইমপোজ করেন তারা এর পক্ষে যেসকল হাদিস পেশ করেন সেই হাদিস ও তার জবাব নিচে দেওয়া হল!
.
***ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেছেন, إِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوْا যখন তোমাদেরকে (যুদ্ধে) বের হবার নির্দেশ দেওয়া হবে, তখনই তোমরা বেরিয়ে পড়বে।
[সাহীহ বুখারী, হা/২৮২৫]
.
জবাবঃ
এই হাদিস কাটছাঁট করে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া চরম ধোকাবাজি ছাড়া কিছুই নয়। নিচে এই হাদিসের বাব ও হাদিসের শানে নুযুল দেওয়া হল।
.
বাবঃ
জিহাদে বের হওয়া ওয়াজিব এবং জিহাদ ও তার নিয়্যাতের আবশ্যকতা।
.
আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ অভিযানে বের হয়ে পড় হালকা অবস্থায় হউক অথবা ভারি অবস্থায় এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা। এই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে। আশু লাভের সম্ভাবনা থাকলে এবং সফর সহজ হলে ...... তারা যে মিথ্যাচারী তা তো আল্লাহ্ জানেন (৪১ঃ ৪২)
.
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হল যে, যখন তোমাদের আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয়, তখন তোমরা ভরাক্রান্ত হয়ে ভূতলে ঝুঁকে পড়? তোমরা কি পরকালের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে পরিতুষ্ট হয়েছ? পরকালের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ তো অতিকিঞ্চিৎকর। (৯ঃ ৩৮)
.
ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে উল্লেখ রয়েছে, فانفروا ثبات অর্থ হলো- বিভিন্ন ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তোমরা জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়। ثبات শব্দটির একবচন ثبة অর্থ ছোট দল।
.
২৬২৯। আমর ইবনু আলী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছিলেন, এই বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। এখন কেবল জিহাদ আর নিয়্যাত। যখনই তোমাদের বের হওয়ার আহ্বান জানোান হবে, তখনই তোমরা বেরিয়ে পড়বে।
.
." باب وُجُوبِ النَّفِيرِ وَمَا يَجِبُ مِنَ الْجِهَادِ وَالنِّيَّةِ وَقَوْلِهِ: {انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالاً وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا لاَتَّبَعُوكَ وَلَكِنْ بَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُ وَسَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ} الآيَةَ. وَقَوْلِهِ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الآخِرَةِ} إِلَى قَوْلِهِ: {عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ}. يُذْكَرُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ انْفِرُوا ثُبَاتًا سَرَايَا مُتَفَرِّقِينَ، يُقَالُ أَحَدُ الثُّبَاتِ ثُبَةٌ حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَنْصُورٌ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَوْمَ الْفَتْحِ " لاَ هِجْرَةَ بَعْدَ الْفَتْحِ وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ، وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوا ".
.
ভাল করে কয়েকবার পড়ে সত্যি করে বলুনতো হাদিসের কোন জায়গায় জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতির নির্দেশ দেওয়া হল?
কোন জায়গায় শাসকের অনুমতিকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে?
.
উপরন্তু এই হাদিসে তাদের মনগড়া আরেকটি ফতুয়াকেও বাতিল করে দেয়!
অনেক চুপা মুনাফিক বলে কাফিরদের সমশক্তির না হলে জিহাদ করা যাবে না।
অথচ আল্লাহ সুস্পষ্ট বলেছেন কম হোক আর বেশি যা শক্তি আছে তা নিয়েই কাফিরদের মুকাবিলাবল কর।
এছাড়া ইবনে আব্বাসও তাই ব্যাখ্যা করেছেন।
.
*** আম্মিজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, اسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ ﷺ فِي الْجِهَادِ فَقَالَ جِهَادُكُنَّ الْحَجُّ আমি আল্লাহর রাসূল ﷺ এর নিকট জিহাদের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, তোমাদের জিহাদ হলো হজ। [সাহীহ বুখারী, হা/২৮৭৫]
.
আম্মিজান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) জিহাদের জন্য শাসকের কাছে অনুমতি চাইলেন।
.
জবাবঃ
এখানে আয়েশা রাঃ শাসক হিসেবে নবীর (ﷺ কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেনি বরং স্বামী হিসেবে অনুমতি চেয়েছিলেন।
তাছাড়া এই হাদিসে মূলত এই মাসলাই সাবিত হয় যে মহিলাদের জন্য হজ্বই হল জিহাদ। অর্থাৎ মহিলাদের জন্য প্রকৃত জিহাদ হল হজ্ব করা।
এজন্যই ইমাম বুখারী বাবের নাম দিয়েছেন,,بَابُ جِهَادِ النِّسَاءِ অর্থাৎ নারীদের জিহাদ।
.
আপসুস!
আমরা কিন্তু একবারো কাশ্মীরের জন্য মহিলাদেরকে জিহাদ করতে বলিনি বরং পুরুষদের বলেছি।
মহিলাদের জিহাদের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে পুরুষদের জিহাদে বাধা দান চরম মিথ্যাচার ও জঘন্য ধোকাবাজি। যদি এটা পুরুষদের জন্য হতো তাহলে সকল সাহাবিই সশস্ত্র ময়দানে না গিয়ে হজ্বের মাধ্যমে জিহাদের ফারদিয়াত শেষ করতেন।
.
*** ইবনু উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেছেন, أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ عَرَضَهُ يَوْمَ أُحُدٍ وَهُوَ ابْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ سَنَةً فَلَمْ يُجِزْهُ وَعَرَضَهُ يَوْمَ الْخَنْدَقِ وَهُوَ ابْنُ خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً فَأَجَازَهُ উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি (যুদ্ধের জন্য) নিজেকে পেশ করেছিলেন, কিন্তু নাবী ﷺ তাঁকে অনুমতি দেননি। তখন তাঁর বয়স ছিল চোদ্দো বছর। তবে খন্দক যুদ্ধের দিন তিনি নিজেকে পেশ করলে নাবী ﷺ তাঁকে অনুমতি দিলেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল পনেরো বছর। [সাহীহ বুখারী, হা/৪০৯৭] অত্র হাদীস থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, জিহাদে যাওয়ার জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে।
.
জবাবঃ
এই হাদিস কোনভাবেই শাসকের অনুমতি নেওয়া সাব্যস্ত করে না বরং কতটুকু বয়স হলে একজন পুরুষের জন্য জিহাদ ফরয হয় সেটাই নির্দেশ করে।
আমার জানা মতে ইসলামে যত যুদ্ধ হয়েছে কোন যুদ্ধেই প্রাপ্তবয়স্ক সাহাবীরা যুদ্ধের জন্য কোন অনুমতি নেননি।
.
*** আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেছেন, إِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ শাসক তো ঢালস্বরূপ। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জিত হয়।
[সাহীহ বুখারী, হা/২৯৫৭]
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, যুদ্ধ করার কর্তৃত্ব শাসকের হাতে ন্যস্ত। সুতরাং যুদ্ধে যেতে হলে তাঁর অনুমতি নিতে হবে।
.
জবাবঃ
এ হাদিসে বলা হয়েছে যুদ্ধে রত মানুষের জন্য তাদের নেতা অর্থাৎ যিনি যুদ্ধ পরিচালনা করবেন যিনি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন তিনি হলেন ঢালস্বরুপ।যিনিই যুদ্ধের নেতা হবেন তার নেতৃত্বেই নিরাপত্তা লাভ হবে।
.
এই হাদিসের কোথায় বলা হল শাসকের অনুমতি ছাড়া জিহাদ করা হারাম?
.
*** শায়খ আবু বকর জাকারিয়া সাহেব কাশ্মীরে জিহাদ করা হারাম এবং কাশ্মীরিদের জন্য মিটিং মিছিল করা ঠিক নয় বলে তা প্রমাণের জন্য একটি হাদীস দলীল হিসেবে দিয়েছেন:
হাদীসটি সহীহ মুসলিমের ৪৬৩৯ নং হাদিস।
.
হাদিসের আরবি শব্দগুলো হচ্ছে এমন :
- مَن قُتِلَ تَحْتَ رايَةٍ عِمِّيَّةٍ، يَدْعُو عَصَبِيَّةً، أوْ يَنْصُرُ عَصَبِيَّةً، فقِتْلَةٌ جاهِلِيَّةٌ..
যে ব্যক্তিকে কোন অন্ধ নেতৃত্বের পিছনে হত্যা করা হল, যারা মানুষকে আসাবিয়্যাতের দিকে আহবান করে অথবা আসাবিয়্যাত কে সাহায্য করে সে যেন জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।
.
( আস্যাবিয়াত বলা হয় যে ইসলামের স্বার্থ বাদ দিয়ে, দ্বীন ইসলামের অনুসরণ বাদ দিয়ে কেবলমাত্র ব্যক্তিপূজা বা বাপ দাদাদের স্বার্থ বা নিজ বংশ অথবা নিজ জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা দেখায় ইসলামের উপরে)
.
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা নববী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন:
.
অর্থাৎ এমন কোন নেতার পিছনে থেকে যুদ্ধ করা যে আসলে সত্যের জন্য যুদ্ধ করে না, যে যুদ্ধ করে নিজ জন্মভূমি বাচানোর জন্য বা যুদ্ধ করে অন্যের উপর ক্ষুব্দ হয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অথবা যে ইসলামের জন্য যুদ্ধ করে না বরং নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে তাহলে, এমন নেতার পেছন থেকে যুদ্ধ করে হত্যা হওয়ার অর্থ হল জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করা।
.
এখানে আবুবকর মুহাম্মদ যাকারিয়া বলেছেন: "কাশ্মীরে যুদ্ধ করা হারাম" সেখানে যুদ্ধ করা বৈধ নয় এবং এর জন্য মিছিল মিটিং করা ঠিক নয়"।
.
যা সম্পূর্ণরূপে হাদিসের সরাসরি অপব্যাখ্যা। এমন ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত কোন সালফে সালেহীনরা দেননি।
আল্লাহ ভাল জানেন শায়েখ কোথা থেকে এমন ব্যাখ্যা আমদানি করলেন!!
.
উপরে যতগুলো হাদিসের জবাব দিয়েছি তার প্রত্যেক হাদিসেইে কোথাও শাসক কোথাও নেতার আনুগত্যের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
.
এখন যদি একটু সময়ের জন্য জাস্ট একটু সময়ের জন্য ধরে নিই যে শাসকের অনুমতি নিতেই হবে তাহলে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খুজতে হবে!
.
*** শাসক বলে কোন শাসক বুঝানো হয়েছে?
কোন অমুসলিম শাসক না কোন মুসলিম শাসক?
যদি মুসলিম শাসক হন তাহলে কোন ধরনের মুসলিম শাসক?
কাফির মুশরিক মুনাফিক না তাওহীদপন্থি মুসলিম শাসক?
যে দেশে কোন মুসলিম শাসক থাকেনা এবং আশেপাশের কোন মুসলিম শাসকই মাজলুমদের সাহায্যে এগিয়ে না আসে তাহলে তারা কার অনুমতিতে জিহাদ করবে?
যদি শাসক মহিলা হন তাহলে কি তারও অনুমতি নিতে হবে?
মহিলা শাসকের আনুগত্য করা কি জায়িয?
যদি মুসলিম শাসক গনতন্ত্র দিয়ে দেশ পরিচালনা করেন তাহলে কি তার আনুগত্য করতে হবে?
গনতন্ত্র যদি হারাম ও শিরক হয়ে থাকে তাহলে তার অনুসরণকারী শাসক কি মুসলিম না মুশরিক?
কতক্ষণ পর্যন্ত একজন মুসলিম শাসকের আনুগত্য করতে হবে?
কতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম শাসকের বিরোধিতা করা যাবে না?
কখন মুসলিম শাসকের বিরোধিতা করা যাবে?
কখন স্বয়ং মুসলিম শাসকের বিরোদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে?
.
আশা করি উত্তরগুলো দিয়ে উপকৃত করবেন।
.
*** এবার কিছু হাদিস রেফারেন্স হিসেবে দিচ্ছি যে হাদিসগুলো থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে যাবে জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতির প্রয়োজন আছে কি না?
যদি থাকে তাহলে কতক্ষণ পর্যন্ত একজন মুসলিম শাসকের আনুগত্য করতে হবে এবং কখন সেই মুসলিম শাসকের আনুগত্য থেকে বেড়িয়ে যাওয়া যাবে।
.
***প্রথমেই খুবই প্রসিদ্ধ একটি হাদিস দিচ্ছি যে হাদিসটি জিহাদ বিরোধী আলীম ও তাদের অন্ধ অনুসারীদের কাছে অমূল্য রতনের মত। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য হল এই একই হাদিসই তারা জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতির যে শর্ত ফতুয়া হিসেবে দেন তা চরমভাবে বাতিল করে দেয়।
প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে তারা কেন এই হাদিসটি বলেন না?
এর উত্তর হল যদি হাদিসের খন্ডাংশ দিয়ে দলিল না দিয়ে দলিল হিসেবে তারা সম্পুর্ন হাদিসটি পেশ করতেন তাহলে তাদের নিজের ফতুয়া নিজের মাধ্যমেই বুমেরাং হয়ে যেত!
***আর কথা না বাড়িয়ে আসুন দেখি সেই হাদিসটি..
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
.
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ : بَايَعْنَا رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِى الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ وَالْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ وَعَلٰى اَثَرَةٍ عَلَيْنَا وَعَلٰى اَنْ لَّا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَه وَعَلٰى اَنْ نَقُوْلَ بِالْحَقِّ أَيْنَمَا كُنَّا لَا نَخَافُ فِى اللّٰهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ. وَفِىْ رِوَايَةٍ : وَعَلٰى اَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَه إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللّٰهِ فِيهِ بُرْهَانٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট বায়আত করেছিলাম যে, আমরা শুনব ও আনুগত্য করব যদিও তা কষ্টে, আরামে, সুখে ও দুঃখে হয়। আমাদের ওপর কাউকে প্রাধান্য দিলে আমরা ধৈর্যধারণ করব। আমরা ক্ষমতাশীল ব্যক্তির বিরোধিতা করব না। আমরা হাকের উপর থাকব, যেখানেই থাকি না কেন। আল্লাহর পথে আমরা কোনো নিন্দাকারীর নিন্দাকে মোটেও পরোয়া করব না।
.
অপর এক বর্ণনাতে আছে, তিনি (ﷺ) আমাদের থেকে বায়আত নিলেন যে, আমরা ক্ষমতাশীল শাসকের বিরুদ্ধাচরণ করব না। তবে তোমরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারো, যদি তাকে প্রকাশ্য কুফরী তথা গুনাহের কাজে নিমজ্জিত হতে দেখো। আর সে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর কুরআন (ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস)-এর ভিত্তিতে কোনো দলীল প্রমাণ বিদ্যমান থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
.
[1]
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) হাদিস নং ৩৬৬৬
সহীহ : বুখারী ৭০৫৫, মুসলিম ১৭০৯, নাসায়ী ৪১৫২, ইবনু মাজাহ ২৮৬৬, সহীহাহ্ ৩৪১৮, সহীহ আত্ তারগীব ২৩০৩।
.
*** হাদিসটি ভালভাবে লক্ষ করলেই সবকিছু দিনের মতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এই হাদিসে রাসুল (ﷺ) শাসকের বিরোধিতা ও আনুগত্যের সুস্পষ্ট সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কতক্ষণ আমরা শাসককে মেনে চলব আর কখন আমরা শাসকের বিরোধিতা করব তা নিয়ে আলীমদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে তার সহজ ও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এই হাদিসেই রয়েছে।
*** আবার হাদিসের সেই অংশটুকু দেখে নিই…
""আমাদের থেকে বায়আত নিলেন যে, আমরা ক্ষমতাশীল শাসকের বিরুদ্ধাচরণ করব না। তবে তোমরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারো, যদি তাকে প্রকাশ্য কুফরী তথা গুনাহের কাজে নিমজ্জিত হতে দেখো। আর সে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর কুরআন এর ভিত্তিতে কোনো দলীল প্রমাণ বিদ্যমান থাকে""
.
*** এই হাদিস থেকে আমরা ক্লিয়ারলি বুঝতে পারলাম যত হাদিসে শাসকের আনুগত্যের আদেশ রয়েছে ইভেন হাবশী গোলাম শাসক হলেও মানতে হবে বলে যে নির্দেশনা রয়েছে তা শুধুমাত্র ততক্ষণ পর্যন্ত মানতে হবে যতক্ষণ ঐ শাসক মুসলিম থাকবে। যদি কোন মুসলিম শাসক প্রকাশ্য শিরক ও কুফরের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে এবং কোরআন ও সুন্নাহ দিয়ে তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে যায় তখন আর সেই শাসকের আনুগত্য করা যাবে না।
.
** বরং তখন ঐ মুসলিম শাসকের আনুগত্য করাই হারাম হয়ে যাবে। অর্থাৎ তখন সেই মুসলিম শাসকের আনুগত্য প্রত্যাহার করে বিরোধিতা করা ফরয হয়ে যাবে।তখন প্রতিটি মুসলিমদের উপর অত্যাবশ্যক হয়ে যাবে ঐ শাসকের বিরোদ্ধে সংগ্রাম করা।
.
সাহাবী আবূ উমামা বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَيُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ؟ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْمِي الْجَمْرَةَ الْأُولَى فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ قَالَ لَهُ عِنْدَ الْجَمْرَةِ الْوُسْطَى فَأَعْرَضَ عَنْهُ، فَلَمَّا رَمَى جَمْرَةَ الْعَقَبَةَ، وَوَضَعَ رِجْلَهُ فِي الْغَرْزِ قَالَ: «أَيْنَ السَّائِلُ؟» قَالَ: أنَا ذَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «أَفْضَلُ الْجِهَادِ مَنْ قَالَ كَلِمَةَ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ»
(বিদায় হজে) প্রথম জামারায় পাথর নিক্ষেপের সময় এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কোন জিহাদ সর্বোত্তম? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে এড়িয়ে গেলেন। অতপর দ্বিতীয় জামারায় গিয়েও তিনি তাঁর উদ্দেশে একই প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও একইভাবে এড়িয়ে গেলেন। অবশেষে তৃতীয় জামারায় বা জামারা আকাবায় গিয়ে যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাথর নিক্ষেপ করলেন এবং উটের রেকাবীতে পা রাখলেন, তিনি জানতে চাইলেন, প্রশ্নকারী ওই ব্যক্তি কোথায়? ওই ব্যক্তি বললেন, এই আমি এখানে হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, সর্বোত্তম জিহাদ ওই ব্যক্তি করে যে অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলে।
.
[মুসনাদ আহমদ : ১৮৮৩০; ইবন মাজাহ, ৪০১২; নাসাঈ : ৪২০৯। অনুরূপ বর্ণনা আরও রয়েছে, তিরমিযী, ২১৭৪, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
.
***এখন আরো কয়েকটি হাদিস দেখার চেষ্টা করি,,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ح وَأَخْبَرَنِي عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ حَدَّثَنَا خَلَفُ بْنُ تَمِيمٍ قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو الْأَحْوَصِ قَالَ حَدَّثَنَا سِمَاكُ بْنُ حَرْبٍ عَنْ قَابُوسَ بْنِ مُخَارِقٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ وَسَمِعْتُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيَّ يُحَدِّثُ بِهَذَا الْحَدِيثِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ الرَّجُلُ يَأْتِينِي فَيُرِيدُ مَالِي قَالَ ذَكِّرْهُ بِاللَّهِ قَالَ فَإِنْ لَمْ يَذَّكَّرْ قَالَ فَاسْتَعِنْ عَلَيْهِ مَنْ حَوْلَكَ مِنْ الْمُسْلِمِينَ قَالَ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ حَوْلِي أَحَدٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ قَالَ فَاسْتَعِنْ عَلَيْهِ بِالسُّلْطَانِ قَالَ فَإِنْ نَأَى السُّلْطَانُ عَنِّي قَالَ قَاتِلْ دُونَ مَالِكَ حَتَّى تَكُونَ مِنْ شُهَدَاءِ الْآخِرَةِ أَوْ تَمْنَعَ مَالَكَ
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, যদি কেউ আমার মাল লুট করতে আসে, তখন আমি কি করবো? তিনি বললেনঃ তুমি তাকে আল্লাহর নামে উপদেশ দাও। সে ব্যক্তি বললোঃ যদি সে উপদেশ গ্রহণ না করে? তিনি বললেনঃ তবে তুমি তোমার অন্যান্য মুসলিম পড়শীর সাহায্য গ্রহণ কর। সে বললোঃ যদি ঐরূপ কোন মুসলিম প্রতিবেশী আমার না থাকে? তিনি বললেনঃ তবে তুমি শাসকের আশ্রয় গ্রহণ করবে। সে বললোঃ যদি শাসকও দূরে থাকে? তিনি বললেনঃ তবে তুমি তোমার মাল রক্ষার্থে জিহাদ করবে; যাতে তুমি শহীদ হয়ে যাও কিংবা তোমার সম্পদ রক্ষায় সক্ষম হও।
.
সূনান নাসাঈ (ইফাঃ) হাদিস নং ৪০৮২
.
এই হাদিসেও দেখা যাচ্ছে যদি শাসক কোন সাহায্য না করে তাহলে জনগন নিজ দায়িত্বে সম্পদ ও জীবন রক্ষার্থে জিহাদ করতে পারবে। অর্থাৎ শাসকের অনুমতির প্রয়োজন নেই।নাহলে রাসুল (ﷺ) অবশ্যই বলতেন শাসক না সাহায্য করলে তুমি কিছুই করবে না।
.
**আরেকটি হাদিস দেখি..
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন এক অন্ধ ব্যক্তির একটি দাসী ছিল। সে নবী (ﷺ) শানে বেয়াদবিসূচক কথাবার্তা বলতো। সে অন্ধ ব্যক্তি তাকে এরূপ করতে নিষেধ করতো, কিন্তু সে তা মানতো না। সে ব্যক্তি তাকে ধমকাতো, তবু সে তা থেকে বিরত হতো না। এমতাবস্থায় এক রাতে যখন সে দাসী নবী (ﷺ)-এর শানে অমর্যাদাকর কথাবার্তা বলতে থাকে, তখন ঐ অন্ধ ব্যক্তি একটি ছোরা নিয়ে তার পেটে প্রচন্ড আঘাত করে, যার ফলে সে দাসী মারা যায়। এ সময় তার এক ছেলে তার পায়ের উপর এসে পড়ে, আর সে যেখানে বসে ছিল, সে স্থানটি রক্তাপ্লুত হয়ে যায়। পরদিন সকালে এ ব্যাপারে যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট আলোচনা হয়, তখন তিনি সকলকে একত্রিত করে বলেনঃ আমি আল্লাহ্র নামে শপথ করে এ ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই এবং ইহা তার জন্য আমার হক স্বরূপ। তাই, যে ব্যক্তি তাকে হত্যা করেছে, সে যেন দাঁড়িয়ে যায়। সে সময় অন্ধ লোকটি লোকদের সারি ভেদ করে প্রকম্পিত অবস্থায় নবী (ﷺ)-এর সামনে গিয়ে বসে পড়ে এবং বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তার হন্তা। সে আপনার সম্পর্কে কটুক্তি ও গালি-গালাজ করতো। আমি তাকে এরূপ করতে নিষেধ করতাম ও ধমকাতাম। কিন্তু সা তার প্রতি কর্ণপাত করতো না। ঐ দাসী থেকে আমার দুটি সন্তান আছে, যার মনি-মুক্তা সদৃশ এবং সেও আমার প্রিয় ছিল। কিন্তু গত রাতে সে যখন পুনরায় আপনার সম্পর্কে কটুক্তি গাল-মন্দ করতে থাকে, তখন আমি আমার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি এবং ছোরা দিয়ে তার পেটে প্রচন্ড আঘাত করে তাকে হত্যা করি। তখন নবী (ﷺ) বলেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক যে, ঐ দাসীর রক্ত ক্ষতিপূরণের অযোগ্য বা মূল্যহীন।
.
গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ) হাদিস নং ৪৩১০
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান (كتاب الحدود)
.
*** এই হাদিসে সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে স্বয়ং রাসুল সঃ শাসক থাকা অবস্থায়ও তাঁর অনুমতি ছাড়া একজন সাহাবী এক দাসীকে হত্যা করে ফেলেন।
যদি শাসকে অনুমতি ছাড়া জিহাদ বা কিতাল হারাম হতো তাহলে অবশ্যই রাসুল (ﷺ) সেই সাহাবীকে এটা বলতেন।
উল্টো রাসুল সঃ দাসীর রক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য অযোগ্য ঘোষনা করেন।
.
*** আরেকটি হাদিস মনে পড়ে গেল..
মুসনাদে আহমাদের একটি হাদিসে আবু বাছিরের রাঃ ব্যাপারে বিস্তারিত এসেছে। ঐ হাদিসের উল্লেখযোগ্য অংশগুলো হচ্ছেঃ
فَجَاءَهُ أَبُو بَصِيرٍ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ وَهُوَ مُسْلِمٌ وَقَالَ يَحْيَى عَنِ ابْنِ الْمُبَارَكِ فَقَدِمَ عَلَيْهِ أَبُو بَصِيرِ بْنُ أُسَيْدٍ الثَّقَفِيُّ مُسْلِمًا مُهَاجِرًا فَاسْتَأْجَرَ الْأَخْنَسَ بْنَ شَرِيقٍ رَجُلًا كَافِرًا مِنْ بَنِي عَامِرِ بْنِ لُؤَيٍّ وَمَوْلًى مَعَهُ وَكَتَبَ مَعَهُمَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُهُ الْوَفَاءَ فَأَرْسَلُوا فِي طَلَبِهِ رَجُلَيْنِ فَقَالُوا الْعَهْدَ الَّذِي جَعَلْتَ لَنَا فِيهِ
অতঃপর কুরাইশের জনৈক ব্যক্তি, আবু বাছির মুসলমান হয়ে তাঁর(রাসুলের) কাছে আসেন। আর ইয়াহইয়া, ইবনুল মুবারক থেকে এভাবে বর্ণনা করেন- অতঃপর আবু বাছির ইবনে উসাইদ আস-সাকাফী মুসলমান হয়ে হিজরত করে তাঁর নিকট আসেন।
তখন কুরাইশরা বনী আমের ইবনে লুওয়াই এর জনৈক কাফের ব্যক্তি, আখনাস ইবনে শারীক ও তার সাথে একজন গোলাম ভাড়া করে তাদের কাছে রাসূল (সাঃ) এর প্রতি চুক্তি পূরণের আবেদন জানিয়ে লিখিত একটি পত্র হস্তান্তর করে। অতঃপর তারা দুই ব্যক্তিকে তার সন্ধানে প্রেরণ করে। তারা বলল- আমাদের সাথে কৃত চুক্তি পুরণ করুন!
অর্থাৎ, এটা পরিষ্কার যে, রাসুল (ﷺ) প্রথমবার আবু বাছির (রাঃ)-কে ফিরিয়ে দেয়ার সময়ঃ — কোন জিহাদের আলোচনা হয় নি। — আবু বাছির (রাঃ), রাসুল (ﷺ) এর কাছে জিহাদের কোন অনুমতি প্রার্থনা করেন নি। — বরং প্রথমবার ফিরিয়ে দেয়ার কারণ ছিল হুদায়বিয়ার সন্ধি, যে কারণে অন্য অনেককে ফেরত দেয়া হয়েছিল।
فَدَفَعَهُ إِلَى الرَّجُلَيْنِ فَخَرَجَا بِهِ حَتَّى بَلَغَا بِهِ ذَا الْحُلَيْفَةِ فَنَزَلُوا يَأْكُلُونَ مِنْ تَمْرٍ لَهُمْ فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ لِأَحَدِ الرَّجُلَيْنِ وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرَى سَيْفَكَ يَا فُلَانُ هَذَا جَيِّدًا فَاسْتَلَّهُ الْآخَرُ فَقَالَ أَجَلْ وَاللَّهِ إِنَّهُ لَجَيِّدٌ لَقَدْ جَرَّبْتُ بِهِ ثُمَّ جَرَّبْتُ فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْهِ فَأَمْكَنَهُ مِنْهُ فَضَرَبَهُ حَتَّى بَرَدَ وَفَرَّ الْآخَرُ
তাই তিনি উক্ত দুই ব্যক্তির নিকট তাকে সমর্পণ করেন। তারা তাকে নিয়ে রওয়ানা দেয়। তারা যুলহুলাইফায় পৌঁছে খেজুর খাওয়ার জন্য থামে। তখন আবু বাছির (রাঃ) দুই ব্যক্তির এক ব্যক্তিকে বললেন, হে অমুক! আল্লাহর শপথ, তোমার তরবারীটি উন্নতমানের মনে হচ্ছে!
তখন অপরজন তা কোষমুক্ত করে বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ! এটা খুব ভাল। আমি এটার ব্যাপারে বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আবু বাছির (রাঃ) বললেন, আমাকে একটু এটা দেখতে দাও! সে তাকে এর সুযোগ দিল। ফলে তিনি তাকে আঘাত করে হত্যা করলেন। আর অপরজন পালিয়ে গেল।
حَتَّى أَتَى الْمَدِينَةَ فَدَخَلَ الْمَسْجِدَ يَعْدُو فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَدْ رَأَى هَذَا ذُعْرًا فَلَمَّا انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قُتِلَ وَاللَّهِ صَاحِبِي وَإِنِّي لَمَقْتُولٌ
সে মদীনায় এসে পৌঁছলো। অতঃপর দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করল। তাকে দেখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, সে তো ভয়ার্ত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকটে পৌঁছে সে বলল, আল্লাহর শপথ! আমার সাথীকে হত্যা করা হয়েছে, আমাকেও হত্যা করা হবে।
এরপর আবু বাছির (রাঃ) এসে পৌঁছেন। ঐ সময় আবু বাছির (রাঃ), রাসুল (ﷺ)-কে কি বলেছেন? আর রাসুল (ﷺ) এর উত্তর কি ছিল? সেটা আমাদের এই আলোচনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
فَجَاءَ أَبُو بَصِيرٍ فَقَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَدْ وَاللَّهِ أَوْفَى اللَّهُ ذِمَّتَكَ قَدْ رَدَدْتَنِي إِلَيْهِمْ ثُمَّ أَنْجَانِي اللَّهُ مِنْهُمْ
এরপর আবু বাছির (রাঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহর নবী (সাঃ) আল্লাহ আপনার চুক্তিকে রক্ষা করেছেন। আপনি আমাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, অতঃপর আল্লাহ আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।
উল্লেখ্যঃ সহীহ বুখারী, সুনানে আবু দাউদ, সহীহ ইবনে হিব্বান, সুনান বায়হাকী, মুসান্নাফে আব্দুর রায্*যাক, মুযাম আল কাবির ইত্যাদি সকল হাদিস গ্রন্থেই আবু বাছির (রাঃ) এর এই একই কথা এসেছে। কোন শব্দেরও হেরফের হয়নি।
এটা ছিল রাসুল (ﷺ) এর কাছে এসে আবু বাছির (রাঃ) এর ২য় বার পালিয়ে এসে বলা কথা। তাহলে দেখা যাচ্ছে ২য় বার পালিয়ে এসে আবু বাছির (রাঃ)
- কোন জিহাদের আলোচনা করেন নি। — রাসুল (ﷺ) এর কাছে কোন জিহাদের অনুমতি প্রার্থনা করেন নি।
এরপর নবী (সাঃ) এর উত্তর ছিল এইঃ
فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيْلُ أُمِّهِ مِسْعَرَ حَرْبٍ لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ
তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, তার মায়ের জন্য আফসোস! (এটা আবেগ প্রকাশে আরবে প্রচলিত একটি কথা), এটা তো যুদ্ধের স্ফুলিংগ, তার জন্য যদি কেউ থাকতো।
এই ছিল রাসুল (সাঃ) উত্তর। উপরে উল্লেখিত সবগুলো হাদিসের কিতাবে একই কথা এসেছে, শুধু ইবনে হিব্বানে مِسْعَرَ حَرْبٍ কথাটা বাদ পরেছে।
فَلَمَّا سَمِعَ ذَلِكَ عَرَفَ أَنَّهُ سَيَرُدُّهُ إِلَيْهِمْ فَخَرَجَ حَتَّى أَتَى سِيفَ الْبَحْرِ
এরপর আবু বাছির (রাঃ) এই কথা শুনে বুঝতে পারলেন যে উনাকে অচিরেই তাদের কাছে ফেরত দেয়া হবে, উনি বের হয়ে গেলেন এবং সিফাল বাহার নামক জায়গায় চলে গেলেন।
- হ্যাঁ, আবু বাছির (রাঃ) এর হিজরত করে মদীনায় যাবার ঘটনা রাসুল (সাঃ) নিজে গ্রহন করেন নি। এর কারণ ছিল হুদাইবিয়ার চুক্তি। — দুইবারই আবু বাছির (রাঃ)-কে রাসুল (সাঃ) ফিরিয়ে দিয়েছেন। তবে সেটা ছিল উনার হিজরত করে মদীনার যাবার ব্যাপারে।
- পরবর্তীতে আবু বাছির (রাঃ) এর জিহাদকে রাসুল (সাঃ) গ্রহন করেন নি, এ রকম কোন ইশারা এই ঘটনায় পাওয়া যায় না। — তাই শাসক ছাড়া জিহাদের ডাক দেয়া যাবে না, এ ব্যাপারে ক্লিয়ার কাট এভিডেন্স রয়েছে কি?
- এই প্রশ্নের উত্তরে আবু বাছির (রাঃ)-কে রাসুল (সাঃ) দুই বার ফিরিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করার কোন যৌক্তিকতা নেই।
- আবু বাছির (রাঃ)-কে দুইবার ফেরত দেয়ায় কিংবা রাসুল (সাঃ) তার কথা গ্রহণ না করায় শাসক/খলিফা ছাড়া জিহাদ করা যাবে না বলে প্রমাণিত হয় না। বরং এই ঘটনা উল্লেখ করে এই দাবী করাই বাতিল ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রমাণিত হবে।
কারণ এটা ছিল মদীনায় আশ্রয় লাভের ব্যাপারে। আর এই ব্যাপারে হুদাইবিয়ার চুক্তির কারণে রাসুল (আঃ) অপারগ ছিলেন।
قَالَ وَيَتَفَلَّتُ أَبُو جَنْدَلِ بْنُ سُهَيْلٍ فَلَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ فَجَعَلَ لَا يَخْرُجُ مِنْ قُرَيْشٍ رَجُلٌ قَدْ أَسْلَمَ إِلَّا لَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ حَتَّى اجْتَمَعَتْ مِنْهُمْ عِصَابَةٌ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا يَسْمَعُونَ بِعِيرٍ خَرَجَتْ لِقُرَيْشٍ إِلَى الشَّامِ إِلَّا اعْتَرَضُوا لَهَا فَقَتَلُوهُمْ وَأَخَذُوا أَمْوَالَهُمْ فَأَرْسَلَتْ قُرَيْشٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُنَاشِدُهُ اللَّهَ وَالرَّحِمَ لَمَّا أَرْسَلَ إِلَيْهِمْ فَمَنْ أَتَاهُ فَهُوَ آمِنٌ فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আবু জান্দাল ইবনে সুহাইলও বের হয়ে আবু বাছিরের সাথে শরীক হন। এরপর কুরাইশের যে ব্যক্তিই ইসলাম গ্রহণ করে বেরিয়ে পড়ত, সেই আবু বাছিরের সাথে মিলিত হত। এমনকি তাদের একটি দল হয়ে যায়।
বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর শপথ! তারা যখনই কোন কুরাইশ কাফেলার শামের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সংবাদ শুনতেন, তখনই তাদের পথ আটকাতেন। তাদেরকে হত্যা করতেন এবং তাদের সম্পদ নিয়ে নিতেন। ফলে কুরাইশরা অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহ ও আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে পত্র পাঠায়, যেন তিনি তাদেরকে মদীনায় ডেকে পাঠান।
আর এরপর থেকে যে (মদীনায়) চলে আসবে, সে নিরাপদ। তাই রাসূল (সাঃ) তাদেরকে ডেকে পাঠালেন।
সুবহানাল্লাহ, এখানে দেখা যাচ্ছে, এক দল সাহাবা (রাঃ) একত্রিত হয়ে আবু বাছির (রাঃ) এর সাথে কুরাইশদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করেছেন।
তাহলে শুধু আবু বাসির রাদিঃ নয় আরও অনেক সাহাবাই এই জিহাদে শরিক ছিলেন।
তাহলে প্রশ্ন আসে, একদল সাহাবা (রাঃ) একত্রে রাসুল (সাঃ) এর সময়েই
- শাসকের অনুমতি / ঘোষণা ছাড়া, — খলিফার অনুমতি / ঘোষণা ছাড়া, — এমনকি স্বয়ং রাসুল (সাঃ) এর অনুমতি / ঘোষণা ছাড়া কুরাইশ কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন।
কেউ এই দাবীও করার সুযোগ নেই যে, রাসুল (সাঃ) এই জিহাদের ঘোষণা দিয়েছেন ,কারণ তখন রাসুল (সাঃ) কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ না করার চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলেন।
আরেকটি ব্যাপার হলোঃ যদি আবু বাছির (রাঃ) এর এই জিহাদ আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর অপছন্দনীয় হতো, তাহলে একদল সাহাবা (রাঃ) আজমাইন একত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর অপছন্দীয় কাজ দীর্ঘদিন ধরে করতে থাকেন কিভাবে?
আর রাসুল (সাঃ) এই পুরো সময়কালে নিরব থাকারই বা অর্থ কি? নিরব থাকার অর্থ কি এটা নয় যে, আবু বাছির (রাঃ) এর জিহাদী কার্যক্রমের ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) এর সমর্থন রয়েছে? তাহলে আমরা দেখলামঃ
আবু বাছির (রাঃ) গেরিলা জিহাদকে রাসুল (সাঃ) গ্রহন করেন নি — এই কথার কোন ভিত্তি নেই।
— আবু বাছির (রাঃ)-কে দুইবার মদীনা থেকে ফিরিয়ে দেয়ার কারণ ছিল হুদাইবিয়ার চুক্তি। এর সাথে আবু বাছির (রাঃ) এর গেরিলা জিহাদের কোন সম্পর্ক ছিল না।
মক্কা থেকে পরবর্তীতে যারাই ইসলাম গ্রহন করতেন, তারাই আবু বাছির (রাঃ) এর ইসাবাতে শরীক হয়ে যেতেন। রাসুল (সাঃ) নও-মুসলিম সাহাবা (রাঃ)-দের এই কর্মকান্ডকে, আবু বাছির (রাঃ) এর গেরিলা জিহাদকে, শাসকের অনুমতি ছাড়া, খলিফার ঘোষণা ছাড়া, স্বয়ং রাসুল (সাঃ) এর অনুমতি ছাড়া জিহাদকে নিষেধ করেন নি। বরং মৌনতা অবলম্বন করেছেন। আর রাসুল (সাঃ) এর গোচরীভূত ব্যাপারে তাঁর মৌনতা অবলম্বন মানে সেটা অনুমোদিত।
উপরোক্ত এই কথাগুলো বুঝার পর, আমরা দেখবো যে, রাসুল (সাঃ), আবু বাছির (রাঃ) এর গেরিলা জিহাদকে, শাসকের / খলিফার ঘোষণা ছাড়া জিহাদকে বরং ইশারার মাধ্যমে (কুরাইশদের সাথে সন্ধির কারণে সরাসরি করেন নি) উৎসাহিত করেছেন।
রাসুল (সাঃ) উৎসাহিত করেছেন তাঁর لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ কথার মাধ্যমে।
.
(১) ইবনে হাজার (রঃ) ফাতহুল বারীতে এই কথার ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ
قوله لو كان له أحد أي ينصره ويعاضده ويناصره وفي رواية الأوزاعي لو كان له رجال فلقنها أبو بصير فانطلق وفيه إشارة إليه بالفرار لئلا يرده إلى المشركين ورمز إلى من بلغه ذلك من المسلمين أن يلحقوا به — فتح الباري — ابن حجر
যদি তাকে সাহায্য-সহযোগিতা ও শক্তি যোগনোর জন্য কেউ থাকতো। ইমাম আওযায়ী (রঃ) এর রেওয়ায়াতে এসেছে, যদি তার পক্ষে কিছু লোক থাকতো! আবু বাছির (রাঃ) কথাটি বুঝে নিলেন। তাই তিনি চলে গেলেন।
এখানে আবু বাছির (রাঃ) এর জন্য ইশারা ছিল, যেন উনি পালিয়ে যান, যাতে উনাকে মুশরিকদের নিকট ফেরত দিতে না হয় এবং এই খবর যে সকল মুসলিমদের কাছে পৌঁছবে, তারা যেন তার সাথে গিয়ে মিলিত হন।
.
(২) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) এর উমদাতুল ক্বারীতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
قوله لو كان له أحد جواب لو محذوف أي لو فرض له أحد ينصره ويعاضده — عمدة القاري شرح صحيح البخاري
তার জন্য যদি কেউ থাকত কথাটির বাকি অংশ উহ্য। পূর্ণ কথাটি হচ্ছে- তার জন্য যদি কেউ থাকত, যে তাকে সাহায্য করবে ও শক্তি যোগাবে।
.
(৩) ইবনে বাত্তাল (রঃ) সহীহ বুখারীর ব্যাখায় একই রকম কথা বলেছেন। তিনি বলেনঃ
قوله: « لو كان له أحد » يعنى: من ينصره ويمنعه، ففهمها أبو بصير، وخرج إلى سيف البحر، وجعل يطلب غرة أهل مكة، وآذاهم حتى لحق به أبو جندل وجماعة، شرح البخاري لابن بطال
অর্থাৎ, যে তাকে সাহায্য করবে ও রক্ষা করবে। আবু বাছির (রাঃ) কথাগুলো বুঝলেন এবং সিফাল বাহারে চলে গেলেন। আর মক্কাবাসীকে অতর্কিত আক্রমণ করে শাস্তি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে আবু জান্দাল (রাঃ) সহ এক দল (মুসলিম) তার সাথে যুক্ত হন।
আর রাসুল (ﷺ) যেখানে ইশারা করেছেন, সেখানে জিহাদকে শাসকের অনুমতি ছাড়া গলদ ও বিভ্রান্তিকর হারাম বলে উল্লেখ করা কি যুক্তি-সংগত?
.
***এবার সালফে সালেহীন থেকে কিছু ইমামদের মতামত পেশ করছি.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের মতে (রহঃ) জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতির প্রয়োজন নেই!!
অর্থাৎ শাসক শর্ত নয়!!
.
তিনি বলেন,,
إذ كانوا يخافون على أنفسهم وذراريهم فلا بأس أن
يقاتلوا من قبل أن يأذن الإمام» ولكن لا يقاتلون إذا لم بخافوا على أنفسهم وذراريهم إلا أن يأذن
الإمام.
জনগণ নিজ ও পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার আশংকা করলে শাসকের অনুমতি
ব্যতীত শক্রর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে । কিন্ত নিজ ও পরিবার-পরিজনের জন্য কোন ভয়ভীতি না থাকলে শাসকের অনুমতি ব্যতীত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে না।
(মানহাজুল জমঈয়ত, পৃষ্ঠা ৫০, টীকা নং ১)
.
এরপরও কি প্রমাণ লাগে??
.
আর কে না জানে যে, মুসলিমরা সবই একই পরিবারের মত বরং তারচেয়েও বেশি !!
.
ইমাম তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
وَأَمَّا قِتَالُ الدَّفْعِ فَهُوَ أَشَدُّ أَنْوَاعِ دَفْعِ الصَّائِلِ عَنْ الْحُرْمَةِ وَالدِّينِ فَوَاجِبٌ إجْمَاعًا فَالْعَدُوُّ الصَّائِلُ الَّذِي يُفْسِدُ الدِّينَ وَالدُّنْيَا لَا شَيْءَ أَوْجَبَ بَعْدَ الْإِيمَانِ مِنْ دَفْعِهِ فَلَا يُشْتَرَطُ لَهُ شَرْطٌ بَلْ يُدْفَعُ بِحَسَبِ الْإِمْكَانِ.
আত্মরক্ষার জন্য জিহাদ হলো সবচেয়ে জরুরী যাতে আগ্রাসী শক্তিকে মুসলিমদের পবিত্র স্থান ও দ্বীন থেকে হটিয়ে দেয়া হয়। আর এটি সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। ঈমান আনার পর সবচেয়ে বড় ওয়াজিব হলো- আগ্রাসী শত্রু যে এই দ্বীন ও জীবনকে কলুষিত করে তাকে প্রতিহত করা। এক্ষেত্রে কোন শর্ত নেই। বরং একে যে কোন উপায়ে প্রতিহত করতে হবে।
.
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
وَإِذَا دَخَلَ الْعَدُوُّ بِلَادَ الْإِسْلَامِ فَلَا رَيْبَ أَنَّهُ يَجِبُ دَفْعُهُ عَلَى الْأَقْرَبِ فَالْأَقْرَبِ إذْ بِلَادُ الْإِسْلَامِ كُلُّهَا بِمَنْزِلَةِ الْبَلْدَةِ الْوَاحِدَةِ، وَأَنَّهُ يَجِبُ النَّفِيرُ إلَيْهِ بِلَا إذْنِ وَالِدٍ وَلَا غَرِيمٍ، وَنُصُوصُ أَحْمَدَ صَرِيحَةٌ بِهَذَا
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যদি কোন শত্রু মুসলিম ভূমিতে প্রবেশ করে তবে ঐ ভূমির নিকটবর্তীদের, তারা অক্ষম হলে তাদের নিকটবর্তীদের উপর তাদেরকে প্রতিহত করা ফরযে আইন হয়ে যায়। কারণ, মুসলিমদের ভূমিসমূহ হল একটি ভূমি সমতুল্য। তাই এ ক্ষেত্রে জিহাদে বের হওয়ার জন্য পিতা-মাতা অথবা ঋণদাতার কাছ থেকে অনুমতি ব্যতীতই অগ্রসর হওয়া ফরয এবং এই ব্যাপারে ইমাম আহমদের বর্ণনাগুলি স্পষ্ট।
.
ফাতওয়াল কুবরা
5/539 পৃঃ
.
এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের আরেকটি হক হলো তাকে সাহায্য করা চাই সে যালেম হোক কিংবা মযলুম। আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا ، أَوْ مَظْلُومًا قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ هَذَا نَنْصُرُهُ مَظْلُومًا فَكَيْفَ نَنْصُرُهُ ظَالِمًا قَالَ تَأْخُذُ فَوْقَ يَدَيْهِ.
তুমি তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করো, চাই সে অত্যাচারী হোক কিংবা অত্যাচারিত। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, অত্যাচারিতকে সাহায্য করার অর্থ তো বুঝে আসল, তবে অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করব? তিনি বললেন, তুমি তার হাত ধরবে (তাকে যুলুম থেকে বাধা প্রদান করবে)। [বুখারী : ২৪৪৪; বাইহাকী : ১১২৯০]
.
কাশ্মীরী মুসলিমদের এই হক কি আপনারা আদায় করছেন?
..
***জিহাদ ছেড়ে দেয়া মুসলিমদের ধ্বংসের কারণ
মহান আল্লাহ বলেন;
وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা ইহ্সান কর। নিশ্চয় আল্লাহ মুহ্সীনদেরকে ভালবাসেন। (আল-বাকারাহ্: ২/১৯৫)
ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা বলতে কি বোঝানো হয়েছে? এ প্রসঙ্গে মুফাসসিরগণের অভিমত বিভিন্ন প্রকার। কারো নিকট এর অর্থ হল, আল্লাহর পথে ব্যয় না করা। কেউ বলেছেন, জিহাদ না করা। আবার কেউ বলেছেন, অব্যাহতভাবে পাপ করা। আর এর সবগুলোই ধ্বংস ডেকে আনে। যদি জিহাদ পরিত্যাগ কর অথবা জিহাদে সম্পদ ব্যয় করা থেকে বিরত থাকো, তাহলে শত্রুরা শক্তিশালী হবে এবং তোমরা হবে দুর্বল, ফলে ধ্বংস হতে হবে।
এ আয়াত নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সহীহ হাদীসে এসেছে; আবূ আইয়ুব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন;
إِنَّمَا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ فِينَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ لَمَّا نَصَرَ اللَّهُ نَبِيَّهُ، وَأَظْهَرَ الْإِسْلَامَ قُلْنَا: هَلُمَّ نُقِيمُ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحُهَا، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: {وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ} فَالْإِلْقَاءُ بِالْأَيْدِي إِلَى التَّهْلُكَةِ أَنْ نُقِيمَ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحَهَا وَنَدَعَ الْجِهَادَ ، قَالَ أَبُو عِمْرَانَ: فَلَمْ يَزَلْ أَبُو أَيُّوبَ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى دُفِنَ بِالْقُسْطَنْطِينِيَّةِ
এ আয়াত আমাদের আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর নবী (ﷺ)-কে সাহায্য করলেন এবং দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন। তখন আমরা বললাম, এসো! এখন আমরা নিজেদের গৃহে অবস্থান করে ধন-সম্পত্তির দেখাশুনায় মনোযোগী হই। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন; তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না। (আল-বাকারাহ, ২/১৯৫)
আমাদের নিজের হাতকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করা অর্থ হচ্ছে, ধন-সম্পদ নিয়েই ব্যস্ত থাকা। এর পরিবৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা এবং জিহাদ ছেড়ে দেয়া। আবূ ইমরান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর থেকে আবূ আইয়ূব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু সর্বদা মহান আল্লাহর পথে জিহাদে অংশ নিতেন, অবশেষে তিনি জিহাদ করতে করতে ইস্তাম্বুলে শহিদ হন। (আবু দাউদ ২৫১২, তিরমিযী ২৯৭২, সহীহ)
.
এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ধ্বংসের দ্বারা এখানে জিহাদ পরিত্যাগ করাকেই বোঝানো হয়েছে। আর এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, জিহাদ পরিত্যাগ করা মুসিলমদের জন্য ধ্বংসেরই কারণ।
.
অপর হাদীসে ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,
إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ، وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ، وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ، وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ، سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ
যখন তোমরা ঈনাহ [1] পদ্ধতিতে ব্যবসা করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না।
.
(আবূ দাউদ ৩৪৬২, সহিহ)
[1]. ঈনাহঃ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ধারে অধিক মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করা। যেমন কেউ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দশ টাকায় কিছু বিক্রি করলো এবং ঐ সময় শেষ হওয়ার পর তা আট টাকায় কিনে নিলো।
.
*** বিভিন্ন কারণ ও প্রেক্ষাপটের জন্য আমরা সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারছি না কিন্তু মুখ বা দাওয়াতের মাধ্যমে বা আমাদের অন্তরে জিহাদের আকাঙ্ক্ষা না থাকলে মুনাফিকের একটা গুণাবলী নিয়েই মৃত্যুবরণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ بِهِ نَفْسَهُ مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ مِنْ نِفَاقٍ
যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো, অথচ কখনো জিহাদ করলো না কিংবা জিহাদের কথা তার মনে কোন দিন উদিতও হলো না, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যুবরণ করলো।
(সহীহ মুসলিম ৪৮২৫)
.
*** আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর কথা যদি সত্য হয় তাহলে বলতে হবে হকপন্থী লোকগুলি কারা, কোনদেশে আছে! নতুবা আপনাদেরকে আল্লাহর রাসুলের (ﷺ) এই হাদিসগুলি ভুল প্রমাণ করতে হবে!!
.
নবী মোহাম্মাদ (ﷺ) বলেন,
لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ – قَالَ – فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ
কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে কিতাল করতে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন । .
সহিহ মুসলিম,২৯২,ইফাঃ
.
এরকম অসংখ্য সহিহ হাদিস আছে যা এখানে উল্লেখ করে পোস্টের কলেবর বাড়াতে চাই না।
.
যারা কাফির মুশরিকদের বিরোদ্ধে লড়াই করার জন্য রাষ্ট্রের শর্ত আরোপ করে বলছেন রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া লড়াই করা যাবে না আল্লাহর ওয়াস্তে তারা বলবেন কি আল্লাহর রাসুল (ﷺ) কেন কোন শাসকের কথা না বলে একটি দলের তথা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কথা বললেন?
.
আল্লাহর রাসুল কেন বললেন না যে, রাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে এই লোকগুলি লড়াই করবে?
কেন বললেন না একজন বা দুজন শাসক হকের পথে থেকে বাতিলের বিরোদ্ধে লড়াই করতে থাকবে?
.
তারা যদি শাসকের অনুমতি নিয়ে শাসকের অধীনেই লড়াই করে থাকে তাহলে ঈসা আঃ কে কেন মুসলিমদের শাসক হিসেবে পাঠানো হবে?
.
যে দলটি কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করতে থাকবে সেই দলটি কোন শাসকের অনুমতি নিয়ে লড়াইই করবে?
বর্তমানে আদৌ কি তারা কোন শাসকের অধীনে আছে?
.
যদি রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া লড়াই করা হারাম হয় তাহলে কি রাসুল (ﷺ) কিছু হারাম মানুষকে হক বলে সার্টিফাইড করলেন?
.
***শেষ করছি ছোট্র একটি কথা বলে..
মনে রাখবেন,জিহাদ হল ইসলামের অন্যতম একটি ইবাদত আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা জান্নাতের বিনিময়ে মুমিমনদের জান ক্রয় করে নিয়েছেন। রাসুল সঃ বলেন জিহাদ হল সর্বোত্তম আমল।
***রাসুল সঃ বলেন,,
رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلاَمُ وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ
সব কিছুর মাথা হল ইসলাম, বুনিয়াদ হল সালাত আর সর্বোচ্চ শীর্ষ হল জিহাদ।
.
সুনান তিরমিজি ,হাদিস নং ২৬১৭
.
নিচের হাদিসটি দুটি পড়ে আপনি নিজেই যাচাই করে নিন আপনার ঈমান এখনো আছে কি না?
.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ
‘যে ব্যক্তি তাদের বিপক্ষে হাত দ্বারা জিহাদ করবে সে মুমিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে কথা দ্বারা জিহাদ করবে সে মুমিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সে মুমিন। এরপরে সরিষা দানা পরিমাণও ঈমান নেই’।
(সহিহ মুসলিম: ৮৫ ইফাঃ)
.
এই হাদীসে তিন মাধ্যমে জিহাদের প্রমান পাওয়া যায়।
(১) সশস্ত্র জিহাদ বা অস্ত্রের মাধ্যমে জিহাদ।
(২) যবানের মাধ্যমে জিহাদ বা দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমে জিহাদ।
(৩) অন্তর দ্বারা জিহাদ বা নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ।
.
*** আল্লাহ যেন আমাদের সকল অন্ধ অনুসরণ পরিহার করে কোরআন সহিহ সুন্নাহর অনুসরণের তাওফিক দেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন