গায়েব

 ইউসুফ - 12:102


আরবি

ذَٰلِكَ مِنْ أَنۢبَآءِ ٱلْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَۖ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُوٓاۡ أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُونَ 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

এটা গায়েবের সংবাদ যা আপনাক আমরা ওহী দ্বারা জানাচ্ছি [১]; ষড়যন্ত্র কালে যখন তারা মতৈক্যে পৌঁছেছিল, তখন আপনি তাদের সাথে ছিলেন না [২]।


[১] বলা হয়েছে, এগুলো গায়েবের সংবাদ, যা আমি আপনাকে ওহীর মাধ্যমে বলি। এ বিষয়বস্তুটি প্রায় এমনি ভাষায় সূরা আলে-ইমরানের ৪৩তম আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে। সূরা হূদের ৪৯ তম আয়াতে নূহ্ ‘আলাইহিস্ সালাম-এর ঘটনা প্রসঙ্গেও তাই বলা হয়েছে। এসব আয়াত থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ্ তা’আলা ওহীর মাধ্যমে নবীগণকে গায়েবের সংবাদ বলে দেন। বিশেষ করে আমাদের শ্রেষ্ঠতম নবী মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এসব গায়েবের সংবাদের বিশেষ অংশ দান করা হয়েছে, যার পরিমাণ পূর্ববতী নবীগণের তুলনায় বেশী। এ কারণে তিনি উম্মতকে এমন অনেক ঘটনা বিস্তারিত অথবা সংক্ষেপে বলে দিয়েছেন, যেগুলো কেয়ামত পর্যন্ত সংঘটিত হবে। ‘কিতাবুল-ফিতান’ শিরোনামে ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে এমন বর্ণনা সম্বলিত বহুসংখ্যক ভবিষ্যদ্বাণী হাদীসের গ্রন্থসমূহে মওজুদ রয়েছে। এ সমস্ত গায়েবের জ্ঞান আল্লাহ্ তাঁর রাসূলকে দান করেছেন।


[২] ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম-এর কাহিনী পুরোপুরি বর্ণনা করার পর আলোচ্য আয়াতসমূহে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, এই কাহিনী ঐসব গায়েবী সংবাদের অন্যতম, যেগুলো আমি ওহীর মাধ্যমে আপনাকে বলেছি। আপনি ইউসুফ-ভ্রাতাদের কাছে উপস্থিত ছিলেন না, যখন তারা ইউসুফকে কূপে নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং এজন্য কলা-কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছিল। এ বর্ণনার উদ্দেশ্য এই যে, ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম-এর কাহিনীটি পূর্ণ বিবরণসহ ঠিক ঠিক বলে দেয়া আপনার নবুওয়াত, রিসালাত ও ওহীর সুস্পষ্ট প্রমাণ। [ইবন কাসীর] কেননা, কাহিনীটি হাজারো বছর পূর্বেকার। আপনি সেখানে বিদ্যমান ছিলেন না যে, স্বচক্ষে দেখে বিবৃত করবেন এবং আপনি কারো কাছে শিক্ষাও গ্রহণ করেননি যে, ইতিহাস গ্রন্থ পাঠ করে অথবা কারো কাছে শুনে বর্ণনা করবেন। অতএব, আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ওহী ব্যতীত এ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার দ্বিতীয় কোন পথ নেই।


আল-আন‘আম - 6:50


আরবি

قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمْ عِندِى خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعْلَمُ ٱلْغَيْبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمْ إِنِّى مَلَكٌۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِى ٱلْأَعْمَىٰ وَٱلْبَصِيرُۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

বলুন , ‘ আমি তোমাদেরকে বলি না যে , আমর নিকট আল্লাহ্‌র ভান্ডারসমূহ আছে, আর আমি গায়েবোও জানি না এবং তোমাদের এও বলি না যে, আমি ফিরিশ্‌তা ,আমার প্রতি যা অহীরূপে প্রেরণ করা হয়,আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি।’ বলুন, ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে?’ তোমারা কি চিন্তা কর না?



হুদ - 11:49


আরবি

تِلْكَ مِنْ أَنۢبَآءِ ٱلْغَيْبِ نُوحِيهَآ إِلَيْكَۖ مَا كُنتَ تَعْلَمُهَآ أَنتَ وَلَا قَوْمُكَ مِن قَبْلِ هَٰذَاۖ فَٱصْبِرْۖ إِنَّ ٱلْعَٰقِبَةَ لِلْمُتَّقِينَ 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

‘এসব গায়েবের সংবাদ আমরা আপনাকে ওহী দ্বারা অবহিত করছি, যা এর আগে আপনি জানতেন না এবং আপনার সম্প্রদায়ও জানত না। কাজেই আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাকীদেরই জন্য [১]।’


[১] অর্থাৎ সমস্ত বিষয়ের কল্যাণকর পরিণাম তো যারা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, তার ফরযকৃত বিষয়সমূহ আদায় করে, অবাধ্যতা পরিত্যাগ করে তাদেরই জন্য। তারাই আখেরাতে যাবতীয় নে'আমত পেয়ে সফল হবে। দুনিয়াতেও তারা তাদের চাওয়া বিষয়াদি প্রাপ্ত হবে। যেভাবে শেষ পর্যন্ত নূহ ও তাঁর সঙ্গী সাথীরা আল্লাহর নির্দেশ মানার মাধ্যমে ধৈর্য ধারণ করে দুনিয়াতে সফলতা লাভ করেছিলেন এবং ধ্বংস থেকে নাজাত পেয়েছিলেন। আখেরাতে তাদেরকে আল্লাহ্ যা দিবার দিলেন এবং তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিলেন। আর যারা মিথ্যারোপ করেছিল তাদেরকে ডুবিয়েছিলেন এবং তাদের সবাইকে ধ্বংস করেছিলেন [তাবারী] ঠিক তেমনি আপনি ও আপনার সাথীরাও সাফল্য লাভ করবেন এবং আপনাদেরও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।



হুদ - 11:113


আরবি

وَلَا تَرْكَنُوٓاۡ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواۡ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنْ أَوْلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর যারা  যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না ; পড়লে আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে [১]  এ অবস্থায় আল্লাহ্‌ ছাড়া তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না। তারপর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। 


[১] এ আয়াতে মানুষকে ক্ষতি ও ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলা হচ্ছেঃ “ঐসব পাপিষ্ঠদের দিকে একটুও ঝুঁকবে না, তাহলে কিন্তু তাদের সাথে সাথে তোমাদেরকেও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে।" এখানে তাদের প্রতি সামান্যতম ঝোঁকা বা আকৃষ্ট হওয়া এবং তাদের প্রতি আস্থা বা সম্মতি জ্ঞাপন করাও নিষেধ করা হয়েছে। এই ঝোঁকা ও আকর্ষণের অর্থ সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের কয়েকটি উক্তি বর্ণিত হয়েছে, যার মধ্যে পারস্পরিক কোন বিরোধ নেই। বরং প্রত্যেকটি উক্তিই নিজ নিজ ক্ষেত্রে শুদ্ধ ও সঠিক ইবন আব্বাস বলেন, যালেমদের চাটুকার হবে না। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, তাদের শির্কী কর্মকাণ্ডের পক্ষপাতিত্ব করবে না। [ইবন কাসীর] কাতাদাহ বলেন, এর অর্থঃ “পাপিষ্ঠদের সাথে বন্ধুত্ব করবে না, তাদের কথামত চলবে না।" [মা'আনিল কুরআন লিন নাহহাস; কুরতুবী] ইবন জুরাইজ বলেন, এর অর্থঃ “পাপিষ্ঠদের প্রতি আদৌ আকৃষ্ট হবে না। [কুরতুবী] আবুল আলিয়া বলেনঃ “তাদের কার্যকলাপ ও কথাবার্তা পছন্দ করো না।” [কুরতুবী ইবন কাসীর সুদী]’ সুদ্দী বলেনঃ “যালেমদের চাটুকারিতা করবে না।” ইকরিমা বলেনঃ “তাদের আনুগত্য করবে না।” [বাগভী] ইবন যায়দ বলেন, তাদের কুফরী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করা পরিত্যাগ করবে না। [তাবারী] ইবন আব্বাস থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে, তোমরা যালেমদের পক্ষ নিও না। তাদের সাহায্য নিও না, তাহলে মনে হবে যেন তোমরা তাদের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সাথে সন্তুষ্ট রয়েছে। [ইবন কাসীর] তাছাড়া বাহ্যিক আকৃতি-প্রকৃতিতে, লেবাস-পোশাকে, চাল-চলনে তাদের অনুকরণও এ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হবে। ইবন যায়দ বলেন, এখানে যালেম বলে কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে। [তাবারী] কিন্তু মুমিনদের মধ্যে যারা যালেম হবে তাদের সাথে সম্পর্ক বিভিন্ন অবস্থার উপর নির্ভরশীল হবে। [ফাতহুল কাদীর] যদিও সত্যনিষ্ঠ আলেমদের মধ্যে অনেকেই এ আয়াতটিকে সবার ক্ষেত্রেই ব্যাপক বলে মন্তব্য করেছেন। [দেখুন, ইবন তাইমিয়্যা, মাজমু ফাতাওয়া: ১৩/২০৩; মিনহাজুস সুন্নাহ: ৬/১১৭]।



আল-কাহ্‌ফ - 18:26


আরবি

قُلِ ٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا۟ۖ لَهُ‌و غَيْبُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِۖ أَبْصِرْ بِهِۧ وَأَسْمِعْۚ مَا لَهُم مِّن دُونِهِۧ مِن وَلِىٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِى حُكْمِهِۦٓ أَحَدًا 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

আপনি বলুন, ‘তারা কত কাল অবস্থান করেছিল তা আল্লাহই ভালো জানেন’, আসমান ও যমীনের গায়েবের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! তিনি ছাড়া তাদের আর কোন অভিভাবক নেই। তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। 



আন-নাম্‌ল - 27:65


আরবি

قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ٱلْغَيْبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

বলুন, ‘আল্লাহ্‌ ব্যতিত আসমান ও যমীনে কেউই গায়েব জানে না [১] এবং তারা উপলব্ধিও করেনা কখন উত্থিত হবে [২]।’


[১] এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করা হয়েছে যে, আপনি লোকদেরকে বলে দিন, যত মাখলুক আকাশে আছে; যেমন ফেরেশতা, যত মাখলুক যমীনে আছে; যেমন মানবজাতি, জিন জাতি ইত্যাদি-তাদের কেউই গায়েবের খবর রাখে না। কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ তা‘আলাই সেসবের খবর রাখেন। গায়েব একমাত্র একজনের কাছে দৃশ্যমান। তিনি হচ্ছেন মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌। তাঁর কাছে কোন জিনিস অদৃশ্য নয়। সবকিছুই তাঁর কাছে সুস্পষ্টভাবে পরিদৃশ্যমান। আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কেউ এ জ্ঞানের অধিকারী নয়। এটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান যতটুকু চান জ্ঞান দান করেন। কোন অদৃশ্য বা কতগুলো অদৃশ্য জিনিসকে তার সামনে উন্মুক্ত করে দেন। কিন্তু অদৃশ্য জ্ঞান সামগ্রিকভাবে কেউ লাভ করতে পারে না এবং “আলেমূল গায়েব” অদৃশ্য জ্ঞানী উপাধি একমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ্‌ বলেনঃ “আর তাঁর কাছেই আছে অদৃশ্যের চাবিগুলো, সেগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।” [সূরা আল-আন‘আম ৫৯] তিনি আরও বলেনঃ “একমাত্র আল্লাহ্‌ই রাখেন কিয়ামতের জ্ঞান। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কি (লালিত) হচ্ছে, কোন প্ৰাণী জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কোন প্রাণী জানে না কোন ভূমিতে তার মৃত্যু হবে।” [সূরা লুকমানঃ ৩৪] তিনি আরও বলেনঃ “তিনি জানেন যা কিছু সৃষ্টির সামনে আছে এবং যা কিছু আছে তাদের অগোচরে। আর তাঁর জ্ঞানের কিছুমাত্র অংশও তারা আয়ত্ব করতে পারে না, তবে তিনি যে জিনিসটির জ্ঞান তাদেরকে দিতে চান, দেন।’’ [সূরা আল বাকারাহঃ ২৫৫] 


কোন সৃষ্টি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে এ ধারণা কুরআন সর্বতোভাবে নাকচ করে দেয়। এমনকি বিশেষভাবে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং স্বয়ং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারেও এ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় যে, তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নন এবং তাকে অদৃশ্যের কেবলমাত্র ততটুকু জ্ঞান আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে যতটুকু রিসালাতের দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। দেখুনঃ সূরা আল-আন‘আমঃ ৫০, সূরা আল-আ‘রাফঃ ১৮৭, সূরা আত-তাওবাহঃ ১০১, সূরা হূদঃ ৩১, সূরা আল- আহযাবঃ ৬৩, সূরা আল-আহকাফঃ ৯, সূরা আত-তাহরীমঃ ৩, এবং সূরা জিনঃ ২৬ আয়াত এ ব্যাপারে কোন প্রকার অনিশ্চয়তা ও সংশয়ের অবকাশই রাখেনি। কুরআনের এ সমস্ত সুস্পষ্ট ভাষণ আলোচ্য আয়াতটির বক্তব্য সমর্থন ও ব্যাখ্যা করে এর পর এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী মনে করা এবং যা কিছু আছে ও যা কিছু হবে এর জ্ঞান আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কারো আছে-এ কথা মনে করা পুরোপুরি একটি শির্কী আকীদা ও বিশ্বাস। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেনঃ “যে ব্যাক্তি দাবী করে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগামী কাল কি হবে তা জানেন, সে আল্লাহ্‌র প্রতি মহা মিথ্যা আরোপ করে। কারণ আল্লাহ্‌ তো বলেন, হে নবী! আপনি বলে দিন আল্লাহ্‌ ছাড়া আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে আর কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না।” [বুখারীঃ ৩০৬২, মুসলিমঃ ২৮৭, মুসনাদে আহমাদঃ ৬/৪৯] 


[২] অর্থাৎ অন্যরা, যাদের সম্পর্কে ধারণা করা হয় যে, তারা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী এবং এ জন্য যাদেরকে তোমরা আল্লাহ্‌র সার্বভৌম কর্তৃত্বে শরীক করে নিয়েছো, তারা নিজেরা তো নিজেদের ভবিষ্যতের খবর রাখে না। তারা জানে না, কিয়ামত কবে আসবে যখন আল্লাহ্‌ পুনর্বার তাদেরকে উঠিয়ে দাঁড় করাবেন। কাতাদাহ বলেন, আল্লাহ্‌ তা‘আলা এ তারকাগুলোকে তিনটি কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আকাশের সৌন্দর্যের জন্য, তার মাধ্যমে পথের দিশা পাওয়ার জন্য আর শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ। এর বাইরে অন্য কোন কাজ যারা এগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট করবে, তারা নিজের পক্ষ থেকে একটা কথা বানিয়ে বলেছে এবং তার বিচার-বিবেকে ভুল করেছে, সঠিক তথ্য হারিয়েছে। আর এমন কাজে এগিয়ে গেছে যাতে তার কোন জ্ঞান নেই। কিছু মূর্খ লোক আছে যারা এগুলোতে গণনার ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা বলে থাকে, যে ব্যাক্তি অমুক অমুক তারকার সময় বিয়ে করবে, তার এটা এটা হবে, আর যে ব্যাক্তি অমুক অমুক তারকার সময় সফর করে, তার এটা বা ওটা হবে, যার সন্তান অমুক ও অমুক তারকার সময় হবে, সে এরকম বা ওরকম হবে। নিঃসন্দেহ যে, প্রতি তারকার সময়েই লাল, কালো, বেঁটে, লম্বা, সুন্দর, কুৎসিত জন্মগ্রহণ করে। এ সকল তারকা থেকে জ্ঞানের দাবী, এ চতুষ্পদ জন্তুর সাথে সম্পর্ক করে কোন জ্ঞানের দাবী, এবং এ সকল পাখির ডান বা বাম হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট করে জ্ঞান বের করা কখনো গায়েবের জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহ্‌ এ ফয়সালা করেছেন যে, তিনি আল্লাহ্‌ ব্যতীত আসমান ও যমীনের কেউই গায়েবের খবর জানবে না। আর তারা জানে না কখন তাদেরকে উত্থিত করা হবে। [ইবন কাসীর] 



আল-জিন - 72:26


আরবি

عَٰلِمُ ٱلْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِۦٓ أَحَدًا 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

তিনিই গায়েবী বিষয়ের জ্ঞানী, তিনি তাঁর গায়েবের জ্ঞান কারও কাছে প্রকাশ করেন না [১] ,


[১] এখানে আল্লাহ্ তা‘আলা রাসূলকে আদেশ করেছেন যে, যেসব অবিশ্বাসী আপনাকে কেয়ামতের নির্দিষ্ট দিন তারিখ বলে দেয়ার জন্যে পীড়াপীড়ি করে তাদেরকে বলে দিন, কেয়ামতের আগমন ও হিসাব নিকাশ নিশ্চিত; কিন্তু তার নির্দিষ্ট দিন তারিখ আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে বলেন নি। তাই আমি জানি না কেয়ামতের দিন আসন্ন, না আমার রব এর জন্যে দীর্ঘ মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিবেন। [ইবন কাসীর]


আল-জিন - 72:27


আরবি

إِلَّا مَنِ ٱرْتَضَىٰ مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ‌و يَسْلُكُ مِنۢ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِۧ رَصَدًا 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া। সে ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের সামনে এবং পিছনে প্রহরী নিয়োজিত করেন [১],


[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা যখন অহীর মাধ্যমে গায়েবী বিষয়ের কোন জ্ঞান তাঁর হেকমত অনুসারে তাঁর রাসূলের কাছে পাঠান তখন তার রক্ষণাবেক্ষণ ও পাহারাদারীর জন্য চারপাশে প্রহরী মোতায়েন করেন। [সা‘দী] আর এখানে প্রহরী বলতে ফেরেশ্তা উদ্দেশ্য। [ইবন কাসীর]


আল-আন‘আম - 6:59


আরবি

وَعِندَهُ‌و مَفَاتِحُ ٱلْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعْلَمُ مَا فِى ٱلْبَرِّ وَٱلْبَحْرِۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِى ظُلُمَٰتِ ٱلْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِى كِتَٰبٍ مُّبِينٍ 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর [১] গায়েবের চাবি [২] তাঁরই কাছে রয়েছে [৩] , তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না।স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারসমূহে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত রয়েছেন, তাঁর অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।


[১]  আলোচ্য ৫৯ থেকে ৬১ নং আয়াতসমূহে তাওহীদের মৌলিক দিকের পথনির্দেশ রয়েছে। সারা বিশ্বে যত ধর্ম প্রচলিত রয়েছে, তন্মধ্যে দ্বীন ইসলামের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য ও প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে একত্ববাদে বিশ্বাস। শুধু আল্লাহর সত্তাকে এক ও অদ্বিতীয় জানার নামই একত্ববাদ নয়, বরং পূর্ণত্বের যত গুণ আছে সবগুলোতেই তাকে একক ও অদ্বিতীয় মনে করা, তাকে ছাড়া কোন সৃষ্ট বস্তুকে এসব গুণে অংশীদার ও সমতুল্য মনে না করা এবং তিনি ব্যতীত আর কারো ইবাদাত না করাকে একত্ববাদ বলা হয়। আল্লাহ তা'আলার গুণাবলীর মধ্যে হচ্ছে জীবন, শক্তি-সামর্থ্য, শ্রবণ, দর্শন, বাসনা, ইচ্ছা, সৃষ্টি, অন্নদান, দয়া, ক্ষমা ইত্যাদি। তিনি এসব গুণে এমন পরিপূর্ণ যে, কোন সৃষ্টজীব কোন গুণে তার সমতুল্য হতে পারে না। এসব গুণের মধ্যেও দুটি গুণ সব চাইতে বিখ্যাত। (এক) জ্ঞান এবং (দুই) শক্তি-সামর্থ্য। তাঁর জ্ঞান বিদ্যমানঅবিদ্যমান, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, ছোট-বড়, অণু-পরমাণু সবকিছুতেই পরিব্যাপ্ত এবং তার শক্তি-সামর্থ্যও সবকিছুতেই পরিবেষ্টিত। দেখুন, [আশ-শির্ক ফিল কাদীম ওয়াল হাদীস; ৪৫৮-৪৯০ ও ৮৮৭-৯৮৯] যে ব্যক্তি এ আল্লাহর জ্ঞান ও শক্তি এ দুটি গুণের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে এবং চিন্তায় উপস্থিত রাখে, তার পক্ষে গোনাহ ও অপরাধ করা কিছুতেই সম্ভবপর নয়। বলাবাহুল্য, কথায় কাজে, উঠায়বসায় এমনকি প্রতি পদক্ষেপে যদি কারো চিন্তায় এ কথা উপস্থিত থাকে যে, একজন সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান তাকে দেখছেন এবং তার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ও মনের ইচ্ছাকল্পনা পর্যন্ত জানেন তবে এ উপস্থিতি কখনো তাকে সর্ব শক্তিমানের অবাধ্যতার দিকে পা বাড়াতে দিবে না। 


[২] (مفاتح) শব্দটি বহুবচন। এর একবচনে (مفتاح I مفتح) উভয়টিই হতে পারে। (مفتح) এর অর্থ ভাণ্ডার এবং (مفتاح) এর অর্থ চাবি- আয়াতে উভয় অর্থ হওয়ারই অবকাশ আছে। তাই কোন কোন তাফসীরবিদ ও অনুবাদক (مفاتح) এর অনুবাদ করেছেন ভাণ্ডার, আবার কেউ কেউ অনুবাদ করেছেন চাবি। উভয় অনুবাদের সারকথা এক। কেননা, 'চাবির মালিক’ বলেও ‘ভাণ্ডারের মালিক’ বোঝানো যায়। [ফাতহুল কাদীর]


[৩]  কুরআনের পরিভাষায় গায়েবের জ্ঞান ও অসীম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার। উদাহারণতঃ কে কখন কোথায় জন্মগ্রহণ করবে, কি কি কাজ করবে, কতটুকু বয়স পাবে, কতবার শ্বাস গ্রহণ করবে, কতবার পা ফেলবে, কোথায় মৃত্যুবরণ করবে, কোথায় সমাধিস্থ হবে এবং কে কতটুকু রিযক পাবে, কখন পাবে, বৃষ্টি কখন, কোথায়, কি পরিমাণ হবে, অনুরূপভাবে স্ত্রী লোকের গর্ভাশয়ে যে ভ্রণ অস্তিত্ব লাভ করেছে, কিন্তু কারো জানা নেই যে, পুত্র না কন্যা, সুশ্রী না কুশ্রী, সৎস্বভাব না বদম্বভাব ইত্যাদি বিষয়সমূহ যা সৃষ্ট জীবের জ্ঞান ও দৃষ্টি সীমা থেকে উহ্য রয়েছে। সুতরাং (وَعِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ) এর অর্থ এই দাড়ালো যে, গায়েবী বিষয়ের ভাণ্ডার আল্লাহরই কাছে রয়েছে। কাছে থাকার অর্থ করায়ত্ত ও মালিকানায় থাকা। উদ্দেশ্য এই যে, গায়েবী বিষয়ের ভাণ্ডারসমূহের জ্ঞান তার করায়ত্ত এবং সেগুলোকে অস্তিত্ব দান করা অর্থাৎ কখন কতটুকু অস্তিত্ব লাভ করবে- তাও তার সামর্থ্যের অন্তর্গত। কুরআনুল কারীমের অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ “প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার আমার কাছেই রয়েছে। কিন্তু আমি প্রত্যেক বস্তু একটি বিশেষ পরিমাণে নাযিল করি"। [ সূরা আল-হিজরঃ ২১]



আল-আ‘রাফ - 7:187


আরবি

يَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَىٰهَاۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّىۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَآ إِلَّا هُوَۚ ثَقُلَتْ فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةًۗ يَسْـَٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِىٌّ عَنْهَاۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

তারা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (বলে)  ‘তা কখন ঘটবে? [১] বলুন, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার রবেরই নিকট। শুধু  তিনিই যথাসময়ে সেটার প্রকাশ ঘটাবেন; আসমানসমূহ ও যমীনে সেটা ভারী বিষয় [২]। হঠাৎ করেই তা তোমাদের উপর আসবে [৩]।’ আপনি এ বিষয়ে সবিশেষ জ্ঞানী মনে করে তারা আপনাকে প্রশ্ন করে। বলুন, ‘এ বিষয়ে জ্ঞান শুধু আল্লাহ্‌রই নিকট, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না [৪]।


[১]  এ আয়াতগুলো নাযিলের পেছনে বিশেষ একটি ঘটনা কার্যকর ছিল। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, জাবাল ইবন আবি কুশাইর ও শামওয়াল ইবন যায়দ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামের নিকট ঠাট্টা ও বিদ্রুপচ্ছলে জিজ্ঞাসা করল যে, আপনি কেয়ামত আগমনের সংবাদ দিয়ে মানুষকে এ ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন- এ ব্যাপারে যদি আপনি সত্য নবী হয়ে থাকেন, তবে নির্দিষ্ট করে বলুন, কেয়ামত কোন সালের কত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে তো আমরাও জানি। এ ঘটনার ভিত্তিতেই আয়াতটি নাযিল হয়। [তাবারী] 


[২]  এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে, এক. কিয়ামতের জ্ঞান অত্যন্ত ভারী বিষয়, আসমান ও যমীনের অধিবাসীদের থেকে তা গোপন রাখা হয়েছে। সুতরাং কোন নবী-রাসূল বা ফেরেশতাকেও আল্লাহ সে জ্ঞান দেননি। আর যে কোন জ্ঞান গোপন রাখা হয় তা অন্তরের উপর ভারী হয়ে থাকে। দুই. কিয়ামত এত ভারী সংবাদ যে আসমান ও যমীন সেটাকে সহ্য করতে পারে না। কারণ, আসমানসমূহ ফেটে যাবে, তারকাসমূহ বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। আর সাগরসমূহ শুকিয়ে যাবে। তিন. কিয়ামতের গুণাগুণ বর্ণনা আসমান ও যমীনের অধিবাসীদের উপর কঠিন। চার. কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা তাদের জন্য এক ভারী বিষয়। [ফাতহুল কাদীর]


[৩]  এ আয়াতে উল্লেখিত (الساعة) শব্দটি আরবী ভাষায় সামান্য সময় বা মুহুর্তকে বলা হয়। আভিধানিকভাবে যার কোন বিশেষ পরিসীমা নেই। আর গাণিতিকদের পরিভাষায় রাত ও দিনের চব্বিশ অংশের এক অংশকে বলা হয় “সা'আহ”, যাকে বাংলায় ঘন্টা নামে অভিহিত করা হয়। কুরআনের পরিভাষায় এ শব্দটি সে দিবসকে বুঝাবার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা হবে সমগ্র সৃষ্টির মৃত্যুদিবস এবং সেদিনকেও বলা হয় যাতে সমগ্র সৃষ্টি পুনরায় জীবিত হয়ে আল্লাহ রাববুল আলামীনের দরবারে উপস্থিত হবে। (ايان) (আইয়্যানা) অর্থ কবে। আর (مرسى) (মুরসা) অর্থ অনুষ্ঠিত কিংবা স্থাপিত হওয়া। (يُجَلِّيْهَا) শব্দটি (تجلية) থেকে গঠিত। এর অর্থ প্রকাশিত এবং খোলা। (بغتة) (বাগতাতান) অর্থ অকস্মাৎ। (حفي) (হাফিয়ূন) অর্থ আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেছেন, জ্ঞানী ও অবহিত ব্যক্তি। প্রকৃতপক্ষে এমন লোককে ‘হাফী’ বলা হয়, যে প্রশ্ন করে বিষয়ের পরিপূর্ণ তথ্য অনুসন্ধান করে নিতে পারে। [তাবার] কাজেই আয়াতের মর্ম দাঁড়াল এই যে, এরা আপনার নিকট কেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে যে, তা কবে আসবে? আপনি তাদেরকে বলে দিন, এর নির্দিষ্টতার জ্ঞান শুধুমাত্র আমার পালনকর্তারই রয়েছে। এ ব্যাপারে পূর্ব থেকে কারো জানা নেই এবং সঠিক সময়ও কেউ জানতে পারবে না। নির্ধারিত সময়টি যখন উপস্থিত হয়ে যাবে, ঠিক তখনই আল্লাহ্ তা'আলা তা প্রকাশ করে দেবেন। এতে কোন মাধ্যম থাকবে না। কেয়ামতের ঘটনাটি আসমান ও যমীনের জন্যও একান্ত ভয়ানক ঘটনা হবে। সেগুলোও টুকরো টুকরো হয়ে উড়তে থাকবে। সুতরাং এহেন ভয়াবহ ঘটনা সম্পর্কে পূর্ব থেকে প্রকাশ না করাই বিচক্ষণতার দাবী ৷ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেয়ামতের আকস্মিক আগমন সম্পর্কে বলেছেন, মানুষ নিজ নিজ কাজে পরিব্যস্ত থাকবে। এক লোক খরিদদারকে দেখাবার উদ্দেশ্যে কাপড়ের থান খুলে সামনে ধরে থাকবে, সে (সওদাগর) এ বিষয়টিও সাব্যস্ত করতে পারবে না, এরই মধ্যে কেয়ামত এসে যাবে। এক লোক তার উটনীর দুধ দুইয়ে নিয়ে যেতে থাকবে এবং তখনো তা ব্যবহার করতে পারবে না, এরই মধ্যে কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। কেউ নিজের হাউজ মেরামত করতে থাকবে- তা থেকে অবসর হওয়ার পূর্বেই কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। কেউ হয়ত খাবারের লোকমা হাতে তুলে নেবে, তা মুখে দেবার পূর্বেই কেয়ামত হয়ে যাবে। [বুখারীঃ ৬৫০৬, মুসলিমঃ ২৯৫৪] সুতরাং যেভাবে মানুষের ব্যক্তিগত মৃত্যুর তারিখ ও সময়-ক্ষণ অনির্দিষ্ট ও গোপন রাখার মাঝে বিরাট তাৎপর্য নিহিত রয়েছে, তেমনিভাবে কেয়ামতকেও-যা সমগ্র বিশ্বের সামগ্রিক মৃত্যুরই নামান্তর-তাকে গোপন এবং অনির্দিষ্ট রাখার মধ্যেও বিপুল রহস্য ও তাৎপর্য বিদ্যমান।


[৪] বলা হয়েছে, আপনি লোকদিগকে বলে দিন যে, প্রকৃতপক্ষে কেয়ামতের সঠিক তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ ছাড়া তাঁর কোন ফিরিশতা কিংবা নবী-রাসূলগণেরও জানা নেই। তবে হ্যা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে কেয়ামতের কিছু নিদর্শন ও লক্ষণাদি সম্পর্কিত জ্ঞান দান করা হয়েছে। আর তা হল এই যে, এখন তা নিকটবর্তী। এ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম বহু বিশুদ্ধ হাদীসে অত্যন্ত পরিস্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ “আমার আবির্ভাব এবং কেয়ামত এমনভাবে মিশে আছে, যেমন মিশে থাকে হাতের দু'টি আঙ্গুল।” [ বুখারীঃ ৬৫০৩-৬৫০৫, মুসলিমঃ ২৯৫০]



আল-আ‘রাফ - 7:188


আরবি

قُل لَّآ أَمْلِكُ لِنَفْسِى نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ ٱلْغَيْبَ لَٱسْتَكْثَرْتُ مِنَ ٱلْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِىَ ٱلسُّوٓءُۚ إِنْ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ 


Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria

বলুন, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা  ছাড়া আমার নিজের ভালো মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি গায়েবের খবর জানতাম তবে তো আমি অনেক কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া আমি তো আর কিছুই নই [১]।’


[১]  এ আয়াতে মুশরিক ও সাধারণ মানুষের সেই ভ্রান্ত আকীদার খণ্ডন করা হয়েছে; যা তারা নবী-রাসূলগণের ব্যাপারে পোষণ করত যে, তারা গায়েবী বিষয়েও অবগত রয়েছেন। তাদের এই শির্কী আকীদার খণ্ডন উপলক্ষে বলা হয়েছে যে, ইলমে-গায়েব এবং সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণুর ব্যাপক ইলম শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'আলারই রয়েছে। এটা তাঁরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এতে কোন সৃষ্টিকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, তা ফিরিশতাই হোক আর নবী ও রাসূলগণই হোক, শির্ক এবং মহাপাপ। তেমনিভাবে প্রত্যেক লাভ-ক্ষতি কিংবা মঙ্গল-অমঙ্গলের মালিক হওয়াও এককভাবে আল্লাহ তা'আলারই গুণ। এতে কাউকে অংশীদার দাঁড় করানোও শির্ক। বস্তুতঃ এই শির্ক বা আল্লাহ রাববুল আলামীনের সাথে কোন অংশীদারিত্বের আকীদাকে খণ্ডন করার জন্যই কুরআন নাযিল হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব ঘটেছে। তাই এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনি ঘোষণা করে দিন যে, আমি আলেমুল-গায়েব নই যে, যাবতীয় পূর্ণ জ্ঞান আমার থাকা অনিবার্য হবে। তাছাড়া আমার যদি গায়বী জ্ঞান থাকতই, তবে আমি প্রত্যেকটি লাভজনক বস্তুই হাসিল করে নিতাম, কোন একটি লাভও আমার হাতছাড়া হতে পারত না। আর প্রতিটি ক্ষতিকর বিষয় থেকে সর্বদা রক্ষিত থাকতাম। কখনো কোন ক্ষতি আমার ধারে-কাছে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারত না। অথচ এতদুভয় বিষয়ের কোনটিই বাস্তব নয়। বহু বিষয় রয়েছে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়ত্ত করতে চেয়েছেন, কিন্তু তা করতে পারেননি। তাছাড়া বহু দুঃখ-কষ্ট রয়েছে যা থেকে আত্মরক্ষার জন্য তিনি ইচ্ছা করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে পতিত হতে হয়েছে। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বেঁধে সাহাবায়ে কেরামের সাথে উমরা করার উদ্দেশ্যে হারাম শরীফের সীমানা পর্যন্ত এগিয়ে যান, কিন্তু হারাম শরীফে প্রবেশ কিংবা উমরা করা তখনো সম্ভব হতে পারেনি; সবাইকে ইহরাম খুলে ফিরে আসতে হয়েছে। তেমনিভাবে ওহুদ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহত হন এবং মুসলিমদেরকে সাময়িক পরাজয় বরণ করতে হয়। এমনি আরো বহু অতি প্রসিদ্ধ ঘটনা রয়েছে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে সংঘটিত হয়েছে। এ সবগুলো থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, তিনি গায়েবের জ্ঞান রাখেন না। শুধু ততটুকুই জানেন, যতটুকু আল্লাহ তাদের জানিয়েছেন। আর আল্লাহ তাদেরকে জানিয়ে দেয়ার পর সেটা জানাকে আর গায়েবের জ্ঞান বলা যাবে না। 





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সয়তান ও নারীর চক্রান্ত

হিন্দুস্তানের যুদ্ধ - গাযওয়াতুল হিন্দ

জিহাদ ''হাদিসের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তির জবাব''